এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে আফগানিস্তানের দরকার ছিল ১৯ রান। শেষ ছয় বলে আট রান। ৪৯তম ওভারে সাকিব আল হাসান ১১ রান দিয়ে ম্যাচটা প্রায় হাতছাড়াই করে ফেলেছিলেন। তবে শেষ ওভারের জন্যই হয়তো সব চমক তুলে রেখেছিলেন মোস্তাফিজ। তার অসাধারণ বোলিংয়ে আফগানিস্তানের সমীকরণ যায় বদলে। শেষ বলে তাদের প্রয়োজন হয় চার রান। সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ব্যাটেই লাগাতে পারেননি। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে তিন রানের জয় নিয়ে ফাইনালের আশাও বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ সাত উইকেটে ২৪৯ রান করে। জবাবে সাত উইকেটে ২৪৬ রানে থামে আফগানিস্তান।
রোববার দিনের অপর ম্যাচে দুবাইয়ে পাকিস্তানকে নয় উইকেটে হারিয়ে সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। টানা দুই হারে ফাইনালের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে শুরু থেকে চমক দেখাতে থাকা আফগানিস্তানের। বুধবার দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। যারা জিতবে তারাই ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে।
২৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানিস্তান শুরুতেই দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলে। তবে ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ (৫৩) ও হাসমাতুল্লাহ শাহিদির (৭১) হাফ সেঞ্চুরিতে জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। দুই হাফ সেঞ্চুরিয়ানের বিদায়ে আফগানিস্তান চাপে পড়লেও অধিনায়ক আসগর ও মোহাম্মদ নবী ভালোভাবেই দলকে টানছিলেন। কিন্তু শেষ লড়াইয়ে আর পেরে উঠল না তারা। মোস্তাফিজুর রহমান ও মাশরাফি মুর্তজা দুটি করে উইকেট নেন। ম্যাচসেরা হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে শুরুর গল্পটা ছিল একই রকম। এশিয়া কাপের এবারের আসরে আগের তিন ম্যাচের মতো চতুর্থ ম্যাচেও গল্পটা বদলালো না। আবুধাবিতে রোববার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের বাঁচা-মরার ম্যাচেও ১৮ রান তুলতেই নেই দুই উইকেট। এরপর থিতু হওয়ার পরও লিটন দাস নিজের উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে আসেন রশিদ খানের বলে। মিডলঅর্ডারের দুই ভরসা সাকিব আল হাসান ও মুশফিক ফেরেন নিজেদের ভুলে রানআউট হয়ে। ৮১/২ থেকে মুহূর্তেই স্কোরটা হয়ে যায় ৮৭/৫! আরেকটি ব্যাটিং হতাশার দিনের অপেক্ষায় তখন বাংলাদেশ। এখান থেকেই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ (৭৪) ও বাংলাদেশ থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া ইমরুল কায়েসের (৭২*) অনবদ্য হাফ সেঞ্চুরিতে ১২৮ রানের জুটি আসে। বাংলাদেশও তাতে পেয়ে যায় লড়াইয়ের পুঁজি। শেষ বলে ইমরুলের চারে সাত উইকেটে ২৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুল যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছেন, তখন ধুঁকছে বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বের ম্যাচে আফগান স্পিনারদের মোটেও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। রশিদের গুগলিতে তো বারবার পরাস্ত হয়েছিলেন। আবার ইমরুল দুবাই পৌঁছান শনিবার রাতে। ভ্রমণ ক্লান্তি তখনও কাটেনি। তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়া যাবে এমন সাহসই হয়তো অনেকে করে উঠতে পারেনি। কিন্তু উইকেটে পড়ে থাকলে যে রান আসবেই, সেটা প্রমাণ করলেন দু’জনেই। উইকেটে টিকে থাকা, সঙ্গে রানের চাকা সচল রেখে এগিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। যে রশিদের বলে আগের ম্যাচে খাবি খেয়েছেন, তাকেই কি না কাল দুটি ছক্কা মারলেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে হয়তো বাংলাদেশের স্কোরটা আরও স্বাস্থ্যকর দেখাত। ৪৭তম ওভারে আফতাব আলমের শটবলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে রশিদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। একই সঙ্গে ভাঙে ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ রানের জুটি। তার আগেই মাহমুদউল্লাহ তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি। তার ৮১ বলের ইনিংসে ছিল দুটি চার ও তিনটি ছয়। তবে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন ইমরুল। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫তম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরিও। ৮৯ বলে ছয় চারে অপরাজিত থাকেন ৭২ রানে। টানা তিন ম্যাচ ব্যর্থতার পর লিটনের ৪১ এবং কাল বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচ হাজার রান ছোঁয়া মুশফিকের ৩৩ রানের ইনিংসটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আফগানদের পক্ষে আফতাব আলম সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন।
দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। পেসার রুবেল হোসেনকে বাইরে রেখে স্পিনে শক্তি বাড়ায় দলটি। ওয়ানডে অভিষেক হয় বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর। একাদশে জায়গা পান হঠাৎ ডাক পাওয়া ইমরুল। তাকে জায়গা দিতে বাদ পড়েন মোসাদ্দেক হোসেন। স্কোর : বাংলাদেশ : ২৪৯/৭ , আফগানিস্তান : ২৪৬/৭ * ফল : বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী।