এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : দু’বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রায় ৩৯ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। শিক্ষক স্বল্পতায় প্রতিষ্ঠানগুলোয় লেখাপড়া চলছে জোড়াতালি দিয়ে।

আশার কথা হচ্ছে, শিক্ষক সংকট কাটাতে আগামী মাসে আসছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। প্রথম থেকে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা এতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার জালে আটকে পড়ায় দু’বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগে সার্কুলার দেয়া যাচ্ছিল না। শিগগিরই মামলার ঝামেলা শেষ হয়ে আসছে।

এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্যপদের তালিকা ও চাহিদাপত্র নেয়ার কাজ শেষ হয়েছে। তবে কোনো কারণে কোনো পক্ষ যদি ফের মামলা করে বসে তাহলে নিয়োগ কার্যক্রম ফের পিছিয়ে যাবে। মামলা হলেও জয়লাভ করবে সরকারই। কেননা আদালতের নির্দেশে নিয়োগনীতি চূড়ান্ত করেই শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কথা হয় এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান মো. আজাহারের সঙ্গে। তিনি জানান, নতুন বিধান অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। নানা জটিলতায় ২ বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ করা যায়নি।

কয়েকটি মামলার রায়ের পর শিক্ষক নিয়োগের পথ খুলেছে। শিক্ষক নিয়োগে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্যপদের চাহিদা নেয়া হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সার্কুলার দেয়া সম্ভব হবে। এনটিআরসিএ সূত্র বলছে, শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে দু’দফায় সারা দেশের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের তালিকা আনা হয়েছে। প্

রথম দফায় আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় সময় বাড়ানো হয় এবং দ্বিতীয় দফার সময়ও শেষ হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর। দুই দফায় ৩৮ হাজার ৮০০ শূন্যপদের চাহিদা পাওয়া গেছে। এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, এ তালিকা আরও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দফতরে পাঠানো হবে।

তাদের মতামতের ভিত্তিতে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, এর আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি। নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় দু’বছর আগে কেন্দ্রীয়ভাবে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়।

এরই অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রথমবার নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তখনকার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনের বেশি চাহিদা দিয়ে থাকে। মামলা রয়েছে এবং কর্মরত আছেন- এমন পদও শূন্য দেখানো হয়।

এ দফায় তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর নিবন্ধিত প্রার্থীদের আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এনটিআরসিএ।

ওই কর্মকর্তা জানান, প্রথমবারের তুলনায় এবার নিয়োগ নীতি হবে ভিন্ন। ২০১৬ সালে উপজেলা-জেলা-বিভাগ কোটা ছিল নিয়োগে। কিন্তু মহিলা কোটা ছাড়া এবার তা কিছু থাকছে না। আদালতের নির্দেশে জাতীয়ভাবে মেধা তালিকা করা হয়েছে।

সে অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহর এবং পৌরসভা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ শতাংশ শিক্ষক মহিলা থাকার বিধান আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষেত্রে এই হার ২০ শতাংশ।

এভাবে আলাদা বিধান থাকায় মেধা তালিকা ও নিয়োগের সুপারিশ তৈরিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। অপরদিকে মহিলা কলেজ ও বালিকা বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষার জন্য পুরুষ শিক্ষক নিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর অনাগ্রহ রয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দেয়া দরকার।

এ দুটি ইস্যুতে নিয়োগবিধি সংশোধনে মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে আসন্ন নিয়োগে এসব দিকও অনুসরণ করা হবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধিত প্রার্থীরা আড়াই শতাধিক মামলা করেন। গত ১৪ ডিসেম্বর ১৬৬টি মামলার রায়ের ৭টি নির্দেশনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নিবন্ধিত প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা ঠিক করা, প্রতিবছর নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন, ৩ মাসের মধ্যে জাতীয়ভাবে নিবন্ধিত সব প্রার্থীর মেধা তালিকা প্রণয়ন, এনটিআরসিএ’র সুপারিশকৃত প্রার্থীদের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে দেয়া না হলে ৬০ দিনের মধ্যে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি বাতিল এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ফের কমিটি গঠন।

এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা জানান, আদালতের নির্দেশনার আলোকে প্রথম থেকে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ওই তালিকায় রয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৮৫ জন। এর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।

এমনকি অনেকে বর্তমানে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায়ও কর্মরত আছেন। চাকরিরতরাও ইচ্ছা করলে আবেদন করতে পারবেন।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ সম্প্রতি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে বেসরকরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়সীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে পারবেন।

১৪ ও ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধণ কার্যক্রম : চলতি মাসের যে কোনো দিন ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশের চিন্তাভাবনা চলছে। ১৮ সেপ্টেম্বর মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়। আগামী মাসে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের সার্কুলার জারির চিন্তাভাবনা চলছে।

এনটিআরসিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, গতবছর আগস্টে ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধনের লক্ষ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হয়। ডিসেম্বরের শেষে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে প্রায় ১৯ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। তাদের মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। একটি পরীক্ষা নিতে সংস্থাটির প্রায় দেড় বছর লাগছে। ১৪তম নিবন্ধন পরীক্ষায় ১০ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন।

১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ চলছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক স্তরে নতুন কিছু বিষয় চালু হয়েছে। ওইসব বিষয়ে সিলেবাস তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। নতুন সিলেবাস তৈরির পরই এ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version