এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি প্রস্থান করছেন- এতে সবচেয়ে কম বিস্মিত হওয়া মানুষদের একজন আমি। আমি বারবার তাকে অনুরোধ করেছি নিজের খ্যাতি রক্ষায় এবং রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে ঠিক এ কাজটিই করার জন্য এবং বিশেষ পরামর্শকের রিপোর্ট বের হওয়ার আগেই কেটে পড়ার জন্য।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের পাশাপাশি মন্ত্রী পর্যায়ের একমাত্র ব্যক্তি তিনি, প্রশাসনে থাকার সময় যার মর্যাদা তর্কাতীতভাবে বেড়েছে বা অন্তত কমেনি। নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ থাকার বিষয় নিয়ে কেবল নিকি হ্যালিই তেমনটি বলতে পারেন।

জাতিসংঘে এবং একনায়কের দিকে ধাবমান একটি প্রশাসনে হ্যালি ছিলেন একজন বলিষ্ঠ পরামর্শক ও মানবাধিকারের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য কণ্ঠস্বর। যেমনটি ওয়াশিংটন পোস্টে রিপোর্ট করা হয়েছে : ‘যদিও হ্যালি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগুলো এগিয়ে নিয়েছেন, তিনি প্রকাশ্যে প্রায়ই এমন অনেক বিবৃতি দিয়েছেন যা হোয়াইট হাউস এবং যে প্রেসিডেন্টকে তিনি সেবা দিয়েছেন তার বিপরীতে গেছে।’

ডিসেম্বরে তিনি বলেছিলেন, ‘যেসব নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অযাচিত যৌনাচারের অভিযোগ তুলছেন, তাদের কথা শোনা উচিত।’ হোয়াইট হাউসের একজন উপদেষ্টা যখন বলেছিলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও বেশি নিষেধাজ্ঞার অনভিজ্ঞ ঘোষণার ক্ষেত্রে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন হ্যালি, জবাবে তিনি বলেছেন : ‘যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, আমি হতবিহ্বল বা দ্বিধান্বিত ছিলাম না।’

সময়টা (হ্যালির চলে যাওয়ার) হতে পারে অত্যুৎসুক; কিন্তু তা যে কারও কল্পনার চেয়ে কম। তিনি প্রশাসনকে দীর্ঘ সময়ের নোটিশ দিচ্ছেন এবং বছর শেষ না হওয়া পর্যন্ত পদ ছেড়ে যাচ্ছেন না। বিচারপতি ব্রেট এম কাভানিকে সুপ্রিমকোর্টে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার সময়জুড়ে প্রকাশিত রিপাবলিকান পার্টি বা জিওপি’র নারীবিদ্বেষী ও নোংরা বাগাড়ম্বরের পর হ্যালি সম্ভবত যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি থামানোর চেষ্টা করেছেন। অথবা কাভানির শপথ গ্রহণ এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে যথেষ্ট এগিয়ে যাওয়ার পর সম্ভবত পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়েছে যে আরও বেশি বিরক্তিকর অবস্থার দিকে যাওয়া যাচ্ছে না।

সাবেক হয়ে পড়া ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদ বা সমমানের কর্মকর্তাদের মধ্যে হ্যালি হচ্ছেন একজন অনন্য ব্যক্তি। রাশিয়াবিষয়ক তদন্তে তিনি জড়িত নন (যদিও আমরা জানি না এ সংক্রান্ত সংযোগের কারণে বিশেষ কাউন্সেলর রবার্ট মুলারের তদন্তে তার জবানবন্দি নেয়া হয়েছে কি না)। রিপাবলিকানদের অভিযোগ করার কোনো কারণ নেই, কেননা এখনও হ্যালি নিজের সমালোচনার ঘটনাগুলোকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার্লটেসভিলের ঘটনা-পরবর্তী সমালোচনার অবস্থানে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

তার হাতে এখন কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, ট্রাম্পের মানসিকতা ও আচরণের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার কাছে রয়েছে। যদি বব উডওয়ার্ডের বই ও নিউইয়র্ক টাইমসের বেনামি অপ-এড লেখকের বিভিন্ন সূত্র সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে তিনি একমত হন যে, দায়িত্ব চালিয়ে নিতে ট্রাম্প অক্ষম, তবে ওইসব গোপন তথ্য কংগ্রেসের সামনে তুলে ধরার বাধ্যবাধকতা তার রয়েছে।

আগামী জানুয়ারিতে যদি ডেমোক্রেটরা পার্লামেন্টে (প্রতিনিধি পরিষদ) জয়লাভ করে তবে নিউইয়র্কের ডেমোক্রেট প্রতিনিধি জেরল্ড নাডলার প্রতিনিধি পরিষদের জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ার হতে পারেন। তখন ট্রাম্পের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা মূল্যায়নের জন্য তিনি হ্যালিসহ রেক্স টিলারসন, এইচআর ম্যাকম্যাস্টার ও গ্যারি চনের মতো যারা ট্রাম্প প্রশাসন ছেড়ে গেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। আমরা যেটা মনে করি, তদন্তের পেছনের বিষয়গুলো যদিও স্পষ্ট নয়; কিন্তু যদি হ্যালি দেশের প্রতি কোনো ঝুঁকির বিষয় জানেন, তাহলে তিনি বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে আসতে বাধ্য।

দ্বিতীয়ত, স্বাভাবিকভাবে তিনি অনুকূল সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন, যা হল বহুমুখী তদন্তের চাপে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেঙে পড়ার জন্য অপেক্ষা করা। তিনি তখন এমন এক অবস্থানে থাকবেন, যিনি কি না বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরতে পারবেন এবং তখন তিনি হবেন এমন ঐকমত্যের ব্যক্তিত্ব, যিনি ট্রাম্পের গুণগ্রাহীদের কাছেও আপত্তিকর হবেন না এবং ওইসব রিপাবলিকানের কাছেও আপত্তিকর হবেন না, যারা সবকিছু ভেঙে পড়লে দাবি করবে তারা সবসময় ট্রাম্পের বিরোধিতাই করেন। তখন হ্যালি হবেন কলুষতাহীন এবং যৌক্তিকভাবে ট্রাম্পের বিপরীতে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য চ্যালেঞ্জকারী, এমনকি ২০২০ সালের জিওপি ফোল্ডের মধ্যেও তা-ই থাকবেন।

তৃতীয়ত, হ্যালি প্রস্তুতি নিতে পারেন সাউথ ক্যারোলিনা রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে ও. গ্রাহামের প্রাইমারির ফেলো হিসেবে, যিনি ২০২০ সালে পুনর্নিবাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেহেতু গ্রাহাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বারবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়েছেন, সেহেতু তিনি ট্রাম্পের স্ক্যান্ডালগুলোর পেছনের বিষয় খোঁজায় মনোনিবেশ করবেন তাকে ধরাশায়ী করার জন্য।

কাভানিকে বিচারপতি নিয়োগের শুনানির সময় গ্রাহামের আক্রমণাত্মক বক্তব্য রিপাবলিকান দলের ভেতরে তাকে নায়ক বানিয়েছে; কিন্তু দলের বাইরে তাকে হাস্যকর ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। ট্রাম্প ও কাভানি কীভাবে অগ্রসর হচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে কেবল কাভানির বিষয়েই নয়, গ্রাহামের আচরণ হীনম্মন্যভাবে ট্রাম্পকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও কাজে না আসতে পারে।

চতুর্থত, যদি রিপাবলিকান পার্টির ওপর ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণ থেকেই যায় এবং আইনের শাসন, বাস্তবতা, নারী ও শালীনতার ওপর তার আক্রমণ চলমান থাকে তবে হ্যালি হতে পারেন মধ্যম-ডানপন্থী প্রার্থী হিসেবে শীর্ষ বা দ্বিতীয় পদের (প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী) জন্য সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাসযোগ্য একজন সদস্য। অবশ্য যদি ডেমোক্রেটরা সীমিত গ্রহণযোগ্যতার অধিকারী, উগ্র বামপন্থী কাউকে প্রার্থী করে, তবেই তেমনটি হতে পারে। হ্যালি-মুরকোওয়াস্কি? কাচিস-হ্যালি নাকি হ্যালি-কাচিস? হ্যালি-হেইটক্যাম্প? বিকল্পের যেন অভাব নেই।

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর : সাইফুল ইসলাম
জেনিফার রুবিন : যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক কলামিস্ট

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version