এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করতে চায় নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এরপর তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন। জোটের প্রস্তাবিত কর্মসূচির মধ্যে আছে- কূটনীতিক ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক, বিভাগীয় শহরে জনসভা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গণসমাবেশ, আলোচনা সভা, রোডমার্চ, লংমার্চ, মানববন্ধন প্রভৃতি।
লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। আজ কমিটির প্রথম বৈঠক হবে। এদিকে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে মুখপাত্র করা হতে পারে। জোট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার চিত্র এবং তাদের দাবিগুলো বিদেশি বন্ধুদের সামনে তুলে ধরতে চান তারা। এ জন্য চলতি মাসের শেষদিকে কূটনীতিক এবং দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা করার বিষয়ে জোট নেতাদের পরিকল্পনা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ নিজেদের সাত দফা দাবি আদায়ে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এ লক্ষ্যে তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবেন।
জানা গেছে, সোমবার বিকালে ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলের চেম্বারে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জোটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। ড. কামাল হোসেন ছাড়াও এ বৈঠকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ, সদস্য সচিব আবম মোস্তফা আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে কর্মসূচির প্রাথমিক একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসে এটি চূড়ান্ত করবেন। আজ মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এটি হবে জোট গঠনের পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে । সরকারের বাইরে থাকা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল এবং ব্যক্তিকে জোটে আনতে শেষ চেষ্টা চালানো হবে বলে জানান তারা।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সোমবার বলেন, ‘আমরা শিগগিরই কর্মসূচি দেব। গত দু’দিন কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রস্তাবিত কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো খসড়া। চূড়ান্ত হয়নি। দু-একদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে বসে কর্মসূচি ঠিক করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব। জেলায় জেলায় সফর, সভা-সমাবেশ করব। এছাড়া গণসমাবেশ, সুধী সমাবেশ, বিভাগীয় শহরে জনসভা, লংমার্চ, রোডমার্চ প্রভৃতি কর্মসূচি দেয়ার কথা ভাবছি আমরা।’
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সাত দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা এই জোট এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।
এ নিয়ে গত দু’দিন কয়েক দফা বৈঠক করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। এসব বৈঠকে তারা সিদ্ধান্ত নেন একমঞ্চ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার।
সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে পুণ্যভূমি সিলেটে প্রথম সমাবেশ করার বিষয়টি জোট নেতাদের প্রথম পছন্দ। সিলেটের পর চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে চান তারা। দুটি বিভাগীয় শহরেই রোডমার্চও করতে চায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিভাগীয় সমাবেশের পাশাপাশি বৃহত্তর জেলা শহরগুলোতেও সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি মহাসমাবেশ আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন প্রক্রিয়ায় প্রথমদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ থাকলেও মতদ্বৈধতা দেখা দেয়ায় শেষ মুহূর্তে দলটি পিছু হটে। বিষয়টি নিয়ে বিকল্পধারার অভ্যন্তরেও তোলপাড় চলছে।
এ অবস্থায় দলটি দুই অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিকল্পধারা বাংলাদেশের একটি বড় অংশের নেতাকর্মীরা দলটি থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ অবস্থায় তাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত করাসহ সমমনা দলগুলোকে সম্পৃক্ত করে জোটের কলেবর আরও বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু সোমবার বলেন, ‘রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ ও আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠক হয়েছে।
কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে আরও বৈঠক হবে। লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হবে। আগামীকালও (আজ) ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। তারপর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’