এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুর ৬০ শতাংশ কাজ হলেও রেললিংক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র দুই শতাংশ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিস্তর ফারাক থাকলেও রেলপথমন্ত্রী, রেল সচিব, রেলওয়ে মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক বলছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন থেকে ট্রেনও চলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এ প্রতিশ্র“তি যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এ কারণে রেললিংক প্রকল্প কাজের কৌশল ও পদ্ধতি পাল্টানো হয়েছে।
দুটি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিতে ফারাক থাকলেও বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী সেতু দিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। প্রকল্পটিসহ চলমান মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রেলে আমূল পরিবর্তন আসবে। পদ্মা সেতু দিয়ে ইলেকট্রিক ট্রেন, বুলেট ট্রেনসহ দ্রুতগতিসম্পন্ন ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ১৩ অক্টোবর রেললিংক প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিন থেকেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। রেললিংক প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
মঙ্গলবার রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, স্বপ্ন পূরণে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরোদমে কাজ চলছে। সেতুর নির্মাণ কাজের বহু পরে রেললিংক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ কারণে আমাদের পরিকল্পনা, কাজের কৌশল পাল্টাতে হয়েছে। কমলাপুর থেকে গেণ্ডারিয়া রেলওয়ে স্টেশন হয়ে প্রায় ২৩ কিলোমিটার উড়াল রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বিলম্বে ঋণের অর্থছাড় ও কাজ শুরু হওয়ায় কৌশল পাল্টিয়ে ৩নং সেকশনের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রথম সেকশনটি হল কমলাপুর-গেণ্ডারিয়া রেলওয়ে স্টেশন, দ্বিতীয় সেকশনটি হল গেণ্ডারিয়া-মাওয়া, তৃতীয় সেকশনটি হল মাওয়া-ভাঙ্গা ও চতুর্থ সেকশনটি হল ভাঙ্গা-যশোর।
প্রথম দিন থেকে ট্রেন চালাতে সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এ প্রকল্পের তৃতীয় সেকশনের একটি বড় অংশ অর্থাৎ ৫-৬ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মধ্যে পড়েছে। বাকি অংশ সেতুর দু’পাশের লিংকের কাজ পুরোদমে চলছে। সেতুর দু’পাশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। চলতি বছরের মে থেকে এ প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। এ লাইনের জন্য নতুন ইঞ্জিন ও বগি ক্রয়ের বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্প পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী জানান, প্রায় চার মাস আগে থেকে এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন কাজে ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে লাইনের কাজ মাত্র দুই শতাংশ হয়েছে। তৃতীয় সেকশনের কাজ পুরোদমে চলছে। এ সেকশনে ৩৫ থেকে ৩৬ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হবে। পদ্মা সেতুর কাজ যত দ্রুত শেষ হবে রেললিংক প্রকল্পের জন্য ততই ভালো জানিয়ে তিনি আরও জানান, সেতুর পিলারগুলোতে রেললাইন স্থাপনের সুযোগ রেখেই কাজ চলছে। সেতুতে প্রায় ৯০ শতাংশ রেলের কাজ সেতু কর্তৃপক্ষ করে দেবে, আমরা শুধু লাইন বসাব। রেলওয়ে মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম জানান, সামনে আমাদের চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে সফল হতে চাই। আমরা নিশ্চিত সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই ট্রেন চালাতে পারব। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে বিষয়টি দু’দেশের সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকে সেতু দিয়ে ট্রেন চালুর নির্দেশনা দেন। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল বেইজিংয়ে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ‘পদ্মা রেললিংক লাইন সেতু প্রকল্পে’ অর্থায়নের জন্য ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আগেই ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এর দুই বছর ১০ মাস তিন দিন পর চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর ‘পদ্মা রেললিংক লাইন সেতু প্রকল্প’ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।