এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : দিনের চতুর্থ ওভারের শেষ বল, উড়িয়ে মারলেন ইমরুল কায়েস। কিন্তু বাউন্ডারিতে ফিল্ডার ছেড়ে দিলেন। এমন দৃশ্যের পর আরো একবার আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ‘ওয়ানডেতে চলে না’ এই ব্যাটসম্যান। ২০০৮-এ অভিষেকের পর থেকে ইমরুলকে এই কথা কতবার যে শুনতে হয়েছে! বিশেষ করে সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময় তার জন্য জাতীয় দলে থাকাই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মাটি কামড়ে পড়েছিলেন, সয়েছেন, লড়াই করেছেন ফিরে আসার।
সব শেষ এশিয়া কাপে দলেই ছিলেন না। কিন্তু তামিম ইকবালের ইনজুরির পর উড়িয়ে নেয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এভাবে তাকে দলে নেয়ায় কত সামালোচনা! কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭২ রানের ইনিংসে দারুণ জবাব দেন।
তাই রোববার মিরপুর শেরেবাংলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার সেঞ্চুরিকে অনেক বঞ্চনার জবাব বললে ভুল হবে না। লিটন কুমার দাসের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে একে একে দেখতে থাকেন সতীর্থদের আত্মহত্যার মিছিল। মিরপুরে দলীয় ১৩৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়লেও ইমরুল তখন প্রাচীর। শঙ্কা ছিল হয়তো ২শ’ ছাড়ানোই কঠিন। কিন্তু মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে নিয়ে দলের মান বাঁচানোর লড়াই শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত নিজের ক্যারিয়ার সেরা ১৪৪ রানে আউট হন। তবে নির্ধারিত ওভার শেষে দলের স্কোর বোর্ডে ২৭১ রান তারই অবদান।
অভিষেকের পর থেকে ওয়ানডে দল থেকে কতবার বাদ পড়েছেন তার শেষ নেই। ১০ বছরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সব চেয়ে লম্বা সময় দলের বাইরে ছিলেন ২০১১ থেকে ১৪ পর্যন্ত। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত খেলেছেন ৭৭ ওয়ানডে ম্যাচ। তবে রোববার দেখা পেয়েছেন তৃতীয় সেঞ্চুরির। প্রথম সেঞ্চুরি করেছিরেন ২০১০-এ। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেতে অপেক্ষা করতে হয় ৬ বছর। ২০১৬ তে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই মিরপুর মাঠেই তিনি খেলেন ১১২ রানের ইনিংস।
বলতে গেলে প্রায় দুই বছর সেই অক্টোবর মাসেই তিনি আবার সেঞ্চুরি তুলে নিলেন। এবার অবশ্য ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেই। সেই সঙ্গে ধুঁকতে থাকা দলকে উদ্ধার করেছেন সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে ৭ম উইকেটে ১২৭ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে। ইমরুল ১১৮ বলে স্পর্শ করেন তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এরপর তার ব্যাট হয়ে ওঠে আরো উত্তাল। সেঞ্চুরির আগে ছিল তিন ছক্কা, সেঞ্চুরির পর ছক্কা মারেন আরো তিনটি। ইনিংসে চার ১৩টি। ৪৯তম ওভারে যখন আউট হয়ে ফিরছেন, নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৪৪ রান। এশিয়া কাপে আফগানিমস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৮৭ রানে দলের ৫ উইকেট পতনের পর হাল ধরেছিলেন ইমরুল। বলতে গেলে তার ব্যাটেই মান বেঁচেছিল।
ইমরুল ব্যাট হাতে শুধু নিজেকেই নয়, ছাড়িয়ে গেছেন অনেকেকই। এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে দেশের হয়ে ব্যক্তি সর্বোচ্চ ইনিংস তামিম ইকবালের। ২০০৯-এ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে তিনি খেলেছিনে ১৫৪ রানের ইনিংস। এরপর ১৪৪ রানের অরেকটি ইনিংসের মালিক মুশফিকুর রহীম। দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপে এ অসাধরণ ইনিংসটি খেলেন মুশফিক। গতকাল তাকে স্পর্শ করেন ইমরুল। ১৪০ বলে তিনি খেলেন এই দুর্দান্ত ইনিংস। তামিম ছাড়া ওপেন করতে নেমে দেড় শ’ রানের ইনিংস ওয়ানডে কারো ব্যাট থেকে আসেনি। সেই হিসেবে তামিমের পর ইমরুলের ইনিংসটাই দেশের যেকোনো ওপেনারের করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বারবার দল থেকে বাদ পড়ায় ইমরুলের আক্ষেপের শেষ ছিল না। গতকাল হয়তো ব্যাটেই জানিয়ে দিলেন এদিন শেষ হয়ে আসছে। সেই সঙ্গে ইমরুলের সেঞ্চুরিটি ছিল আরো একটি আনন্দের উপলক্ষ। ব্যাটকে শিশু সন্তানের মতো কোলে ঝুলিয়ে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকেই উৎসর্গ করেছেন তিনি।