এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে একটি অর্থবহ সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রধানমন্ত্রী ও দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে দেয়া এক চিঠিতে এ তাগিদ দিয়ে ড. কামাল বলেছেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবার অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটি অর্থবহ সংলাপের তাগিদ অনুভব করছে এবং সে লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।’
রোববার রাতে ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ চিঠি হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে চিঠি হস্তান্তর করতে সেখানে যান গণফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিকুল্লাহ এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেসউইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির খান। শেখ হাসিনা ছাড়াও এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেও আলাদা একটি চিঠি দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ চিঠি দুটি গ্রহণ করার পর সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে দলীয় প্রতিক্রিয়া পরে জানানো হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যকরী সদস্য এসএম কামাল।
চিঠির সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্যও সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি দুটির ভাষা অভিন্ন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে এক পৃষ্ঠার এই চিঠিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ড. কামাল হোসেন বলেন, “প্রিয় মহোদয়। শুভেচ্ছা নেবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা। যেসব মহান আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে উজ্জীবিত ও আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ করেছিল- তার অন্যতম হচ্ছে ‘গণতন্ত্র’। গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে এবং জনগণকে শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করবে- এটাই আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার।”
তিনি বলেন, “আপনি নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনকে একটি মহোৎসব মনে করে। ‘ব্যক্তির এক ভোট’র বিধান জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধুই নিশ্চিত করেছেন- যা রক্ষা করা আমাদের সবার সাংবিধানিক দায়িত্ব।”
চিঠিতে ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘ইতিবাচক রাজনীতি একটা জাতিকে কিভাবে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারগুলো আদায়ের মূলশক্তিতে পরিণত করে- তা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন। নেতিবাচক রুগ্ন-রাজনীতি কিভাবে আমাদের জাতিকে বিভক্ত ও মহাসংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, তাও আমাদের অজানা নয়। এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটানো আজ আমাদের জাতীয় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবি ও ১১ দফার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে।’
চিঠির শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন ড. কামাল হোসেন।
চিঠি হস্তান্তরের পর গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা যে ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য দিয়েছি, এগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে চাই। সংলাপের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। চিঠিতে সেই বিষয়গুলোই আছে।’ অন্যদিকে আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে তারা দুটি চিঠি দিয়েছেন। আমি এসব গ্রহণ করেছি। এটা যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেব।’
বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি এবং নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন। তাদের সাত দফার মধ্যে রয়েছে- সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না বলে তাদের মত। এ দাবিতে সিলেট ও চট্টগ্রামে সমাবেশও করেছে। আগামী ২ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই সমাবেশের আগে সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন ড. কামাল হোসেন।