এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঐক্যফ্রন্টের পথ খোলা রেখে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দলের তৃণমূলে আন্দোলনের বার্তা দিয়ে রেখেছে বিএনপি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ আশানুরুপ কোনো বার্তা না দিলেও বরফ গলার সূত্রপাত হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। অবশ্য সংলাপের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন বিরোধী নেতারা। তাদের মতে, কোনো দাবিই আন্দোলন ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধীর পদক্ষেপে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপে নিজেদের অর্জন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখেই নেয়া হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি।
সূত্র মতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই রাজপথের আন্দোলনে থাকতে চায় বিএনপি।
সে আন্দোলনের একটি প্যাকেজ কর্মসূচি প্রণয়নে কাজ করছেন দলটির নীতিনির্ধারক ফোরাম। শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ধারাবাহিকভাবে সে কর্মসূচিগুলোর ঘোষণা আসবে। সে অনুযায়ী রাজপথের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে দলটির নেতাকর্মীরা। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে রাজপথের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে তৃণমূল পর্যায়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংলাপ পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি বৈঠক করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। বৈঠকে বিএনপি নেতারা একমত হন সরকার তাদের কোনো দাবি মেনে নেবে না। তাই দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তাদের রাজপথে নামতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা জানান, আগামী ৬ই নভেম্বর ঢাকায় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ। সেখানে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন নেতারা। সরকারের পদক্ষেপ দেখবে, তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
সংলাপের বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য দলের নেতারা জানান, সরকারের সঙ্গে তাদের সংলাপে এক ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। তাদের দেয়া সাত দফা দাবির মধ্যে কয়েকটি দাবি মেনে নেয়ার কথা বলা হলেও তা বাস্তবিক অর্থে তাদেরকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টামাত্র। বিশেষ করে সারা দেশে রাজনৈতিক গায়েবি মামলার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তালিকা চাওয়া হলেও এই তালিকা কবে কার কাছে এবং কীভাবে দেয়া হবে বা যাচাই-বাছাই কবে শেষ করা হবে আর কবে এসব মামলা স্থগিত করার নির্দেশনা দেয়া হবে তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির বিষয়টি নিয়েও তাদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।
এর বাইরে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাদের প্রধান দাবিগুলোকেই সরকার সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। তাই আগামী নির্বাচন নিয়ে যে জটিলতা রয়েছে তা সমাধানের দিকে যাচ্ছে কিনা এমন সংশয় রয়ে গেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের মনে। সংলাপে অংশ নেয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এই সংলাপে তাদের কিছুই অর্জন হয়নি। তাদের মধ্যে ভালো আলোচনার পরিবেশ ছিল। কিন্তু যে কারণে এই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেটাই বাস্তবায়ন হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তাদের কোনো দাবিই সরকার মেনে নেয়নি। এমনকি সংবিধানের মধ্যে থেকেও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তাদের এমন প্রস্তাবেও সরকার কোনো উৎসাহ দেখায়নি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেছেন, এই সংলাপে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাপ্রদ কোনো সফলতা আসেনি। তবে আশা ছেড়ে দিলেও চলবে না। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলন প্রয়োজন মনে করলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। তারা রাজপথের আন্দোলনের চেয়ে আলোচনা ও নির্বাচনের প্রস্তুতিকেই বড় আন্দোলন হিসেবে ভাবতে চাইছেন। গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমার মতে- এখন নির্বাচনটাই, নির্বাচনে ভালোভাবে অংশগ্রহণ করাটাই হচ্ছে বড় আন্দোলন। নির্বাচনে ভালোভাবে অংশগ্রহণ করতে হলে ৫ লাখ কর্মীকে (পোলিং এজেন্ট) প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাদেরকে একটি কথা বলতে হবে, তোমাকে মারলেও তুমি জায়গা ছাড়বে না। তোমার সামনেই ভোট গুনতে হবে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে নির্বাচনে প্রভাব থাকতে পারে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারে উনি একলাই সবকিছু করে ফেলতে পারলে এত নরম হতেন না। আমার মনে হয়, আমাদের যুদ্ধের প্রস্তুতিটি আরো ভালোভাবে নেয়া উচিত।
যুদ্ধটা হলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের। এখন মাঠে নেমে সময় ব্যয় করা যাবে না। এখন আমাদের সারা দেশে বেশ কয়েকটি মিটিং করে দেশবাসীকে আমাদের ১১ দফা বুঝিয়ে বলা দরকার। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সরকার ক্ষমতায় গেলে কি কি করবে সেটা ফোকাস করা দরকার। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, রাজপথের আন্দোলনই একমাত্র আন্দোলন নয়। সংলাপও আন্দোলনের অংশ। আলোচনার মাধ্যমে, জনমতের চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে হবে। তিনি বলেন, রাজপথের কর্মসূচি দেয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমরা আন্দোলন করতে চাই। যেটা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা সাধারণত নিয়মিত সমাবেশ করছি।
৬ই নভেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ রয়েছে। এর পর ৯ই নভেম্বর রাজশাহী, ১২ই নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ করবো। আমরা চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হলো আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করবো। এসবে যদি না হয় তাহলে অন্যান্য পন্থা অবলম্বন করতেও বাধ্য হবো। তবে আমরা চাই আমাদের আন্দোলন হবে অহিংস। নেতারা জানান, তারা সরাসরি হরতাল-অবরোধের দিকে যেতে চান না। যতটুকু সম্ভব গণতান্ত্রিক ও অহিংসভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করবো। তবে তফসিল ঘোষণা করলে আমরা কি করবো সে বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। সিদ্ধান্তও হয়নি।