এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবারও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের মিছিল স্লোগানে কার্যালয় চত্বর দিনভর মুখরিত ছিল।

দ্বিতীয় দিনের মতো দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ব্যান্ড বাজিয়ে মিছিল নিয়ে তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে আসেন।

সকাল ১০টার আগেই বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কের নাইটেঙ্গল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত জনসমুদ্রে রূপ নেয়। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা স্লোগান দেন।

মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত আট বিভাগে মোট ১২১৩টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। দু’দিনে ২৫৩৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেয়া যাবে।

সোমবার প্রথম দিন আট বিভাগে ১৩২৬টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে বিএনপি। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলসহ দলের সব পর্যায়ে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকদের বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তির যে উত্থান ঘটেছে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের জনস্রোতই তার প্রমাণ। এখানে মানুষের ভিড়ে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা নেই।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ও গরমের মধ্যে চরম কষ্ট করে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন।

দ্বিতীয় দিনে যারা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন : কুমিল্লার দুটি আসনের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

তার পক্ষে ছেলে খন্দকার মারুফ হোসেন ফরম দুটি কেনেন। এছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জ আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরিশাল-২ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা দুলাল হোসেন, পটুয়াখালী-২ আসনে মুনির হোসেন, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ ও কুমিল্লা-৫ আসনে সাংবাদিক শওকত মাহমুদ মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

এছাড়া মনোনয়ন ফরম কিনেছেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কারাবন্দি মনিরুল হক চৌধুরী (কুমিল্লা-৬ ও ১০), ভিপি জয়নাল আবেদীন (ফেনী-২), আবদুল আউয়াল মিন্টু (ফেনী-৩), সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স (ময়মনসিংহ-১), তানজীন চৌধুরী লিলি (ময়মনসিংহ-৩), অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন (ময়মনসিংহ-৪), আক্তারুজ্জামান বাচ্চু (ময়মনসিংহ-১০), সাইয়েদ্যুল আলম বাবুল ও মজিবুর রহমান (গাজীপুর-১), গাজীপুরের সাবেক সিটি মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং প্রবীণ শ্রমিক নেতা ও মহানগর সভাপতি হাসান উদ্দিন সরকার (গাজীপুর-২), ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর-৩), স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান (গাজীপুর-৪), অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও সাখাওয়াত হোসেন সবুজ (গাজীপুর-৫), সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু (টাঙ্গাইল ২ ও ৫), আফরোজা খান রিতা ও এসএ কবির জিন্না (মানিকগঞ্জ-১), এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত (জামালপুর-১), মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল (জামালপুর-৩), ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান (নরসিংদী-৩), স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল (নরসিংদী-৪), শরীফুল আলম (কিশোরগঞ্জ-৪), ইশতিয়াক আহমেদ নাসির (কিশোরগঞ্জ-৫), দেলোয়ার হোসেন দুলাল, রফিক হেলালী ও হাসান বিন সোহাগ (নেত্রকোনা-৩), ডা. আনোয়ার (নেত্রকোনা সদর), ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-৪), শহীদুল্লাহ ইমরান (নেত্রকোনা-৫), নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পতœী তাহসিনা রুশদির লুনা (সিলেট-২), সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল (হবিগঞ্জ-৪), খন্দকার আবু আশফাক, মিয়া মো. আনোয়ার (ঢাকা-১), অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া (ঢাকা-৪), সালাউদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৪), তানভীর আহমেদ রবিন ও মীর হোসেন মিরু (ঢাকা-৫), ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি (ঢাকা-৭ ও ১৪), প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর পতœী নাছিমা আক্তার কল্পনা (ঢাকা-৭), হাবিব-উন-নবী খান সোহেল (ঢাকা-৮), সাইফুল ইসলাম নীরব, আনোয়ারুজ্জামান (ঢাকা-১২), আবদুস সালাম ও হেলেন জেরিন খান (ঢাকা-১৩), মামুন হাসান (ঢাকা-১৫), একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন (ঢাকা-১৬), মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ও এএসএম জাহাঙ্গীর (ঢাকা-১৮), ফেরদৌস মুন্না (চট্টগ্রাম-৪), নাজমুল মোস্তফা আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন (নোয়াখালী-১), শামসুজ্জামান দুদু (চুয়াডাঙ্গা-১), শাহজাহান ওমর (ঝালকাঠি-১), শহিদুল ইসলাম বাবুল (ফরিদপুর-২), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী-১), মুনির হোসেন ও মনিরুল ইসলাম (পটুয়াখালী-২), হাসান মামুন (পটুয়াখালী-৩), এবিএম মোশাররফ হোসেন (পটুয়াখালী-৪), আসাদুজ্জামান পলাশ ও আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন (মাদারীপুর-৩), আমিরুল ইসলাম খান আলীম (সিরাজগঞ্জ-৫), মমতাজ উদ্দিন মণ্ডল, মো. মাসুদ রানা প্রধান, ফজলুর রহমান (জয়পুরহাট-১), এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন (জয়পুরহাট-২), রকিবুল ইসলাম বকুল (খুলনা-৩), সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদহ-৪), সেলিমা রহমান (বরিশাল-৩), আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ (বরিশাল-৫), নাসির উদ্দিন কালু (শরীয়তপুর-১), সফিকুর রহমান কিরণ (শরীয়তপুর-২), মিয়া নূরুউদ্দিন অপু (শরীয়তপুর-৩), অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (যশোর-৩), আবদুল মতিন (নওগাঁ-৪), সেলিমুজ্জামান সেলিম (গোপালগঞ্জ-১), মিজানুর রহমান মিনু (রাজশাহী-২), মতিউর রহমান মন্টু, রায়হানুল আলম ও শফিকুল হক মিলন (রাজশাহী-৩), নাদিম মোস্তফা (রাজশাহী-৫), সমীরণ দেওয়ান (খাগড়াছড়ি-১)। এছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি ঢাকা -১৪ ও ১৬ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।

নয়াপল্টন নেতাকর্মীদের ভিড়ে জনসমুদ্র : দলীয় মনোনয়ন বিক্রির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার নয়াল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর সামনের সড়ক নেতাকর্মীদের ভিড়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।

সকাল ১০টা থেকে ফরম বিক্রি শুরু হলেও নেতাকর্মীরা সড়কে অবস্থা নেন ৮টা থেকে। সাড়ে ৯টার পর ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁর মোড় পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা ও কর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে এই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ধানের ছড়া নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ছিল খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। দলীয় মনোনয়ন ক্রয়ের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার্যালয়ে ঢুকতেই হিমশিম খেতে হয়।

অনেকে সকাল ১০টায় এসে ভিড় দেখে ফিরে যান। তারা দুপুরের পর এসে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। বরিশাল-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী দুলাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নেতাকর্মীদের এত ভিড়, মনে হচ্ছে একটি বড় সমাবেশ চলছে। সকালে মনোনয়ন ফরম তোলার কথা ছিল। ভিড় দেখে অপেক্ষা করে দুপুরে তুলেছি।

হাইকমান্ড মনোনয়ন দিলে এ আসনটিতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। শুধু কার্যালয়ের নিচে নয়, আশপাশের অলিগলির চায়ের দোকানেও ছিল উপচেপড়া ভিড়।

খাবারের দোকানগুলোতে একই অবস্থা দেখা গেছে। নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যান্ড দলের পাশাপাশি হাতি সঙ্গে করে মনোনয়ন ফরম কিনতে এসেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ।

মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসেন। পটুয়াখালী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মুনির হোসেন বলেন, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি ঠিকই কিন্তু নেতাকর্মীদের মতো আমারও কোনো উচ্ছ্বাস নেই। কারণ, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নেতাকর্মীদের মনে উচ্ছ্বাস আসে না।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version