এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে ২০১৪’র ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে যে দেশটি আগাগোড়া জোরালো সমর্থন জানিয়ে এসেছিল, সেটি ছিল ভারত। ওই নির্বাচনকে সফল করার লক্ষ্যে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব নির্বাচনের ঠিক আগে ঢাকা সফর পর্যন্ত করেছিলেন। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পাঁচ বছর বাদে বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচনকে ঘিরে ভারত কিন্তু এবার অনেকটাই নিস্পৃহ- এই নির্বাচনের প্রাক্কালে ভারতের দিক থেকে তেমন কোনো সক্রিয়তাই চোখে পড়ছে না। বিবিসি।
কিন্তু কেন ভারত এ ধরনের অবস্থান নিচ্ছে, বাংলাদেশে এবারের ভোটকেই বা তারা কী চোখে দেখছে? আসলে বাংলাদেশে ২০১৪-র নির্বাচনের সময় ভারতের দিক থেকে যে ধরনের অতি-সক্রিয়তা ছিল, পাঁচ বছর বাদে এবার তার কিন্তু ছিটেফোঁটাও নেই। এ বছরেই নির্বাচন হয়েছে নেপাল এবং মালদ্বীপেও, সেখানেও ভারতের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। দিল্লিতে ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের সিনিয়র ফেলো ড. পট্টনায়ক মনে করছেন, খুব সচেতনভাবেই ভারত এবার বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। ড. পট্টনায়কের কথায়, “২০১৪-তে ভারত যেভাবে পররাষ্ট্র সচিবকে ঢাকায় পাঠিয়েছিল সেই অভিজ্ঞতা কিন্তু খুব সুখকর হয়নি।
সেটাকে অনেকেই ভারতের হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছিলেন- যদিও ভারতের আসল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে একটা সাংবিধানিক বিপর্যয় এড়ানো। কিন্তু এখন বাংলাদেশের রাজনীতি যে ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে ভারতের উদাসীন থাকাটাই উচিত, আর তারাও ঠিক সেটাই করছে।
ভুললে চলবে না, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কও এর মাঝে অনেক পরিণত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নিতে রাজি হয়নি বলেই সেই নির্বাচনকে ঘিরে এত প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এবারে নির্বাচন অনেকটাই অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে- ফলে ভারতেরও এত মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই, বিবিসিকে বলছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী।
তার কথায়, বড় পরিবর্তন বাংলাদেশে যেটা দেখতে পাচ্ছি তা হলো ভারতে যেটাকে আমরা ‘মহাগঠবন্ধন’ বলি, সেই ধাঁচে ওখানেও বিরোধীদের ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করেছে। “এখন তো আবার যুক্তফ্রন্টও চলে এসেছে। ফলে নির্বাচন সঠিক পথেই আছে মনে হচ্ছে- আর এভাবে যদি সব এগোয় তাহলে তো ২০১৪-র তুলনায় সেটা সম্পূর্ণ আলাদা!” “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা তো এখন স্বাভাবিক পথেই আছে মনে হচ্ছে। সব দলও নির্বাচনে যোগ দিতে চাইছে, যেমনটা স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয় আর কী। কাজেই মনে তো হয় না এই নির্বাচনকে সমালোচনা করার কোনো সুযোগ আছে বলে!” বাংলাদেশে ভারতের আর এক প্রাক্তন হাইকমিশনার বিনা সিক্রিও মনে করেন, “যদিও এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়- তারপরও বিএনপির নির্বাচনে যোগদান খুবই ইতিবাচক ব্যাপার।” “তারা যেভাবে জোট শরিকদের সঙ্গে কথা বলছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করছে- যেমনটা স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে- সেটা অবশ্যই দারুণ বিষয়।” “ভারত এখানে কী করলো, বা কী করলো না ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে তা খোঁজার কোনো দরকারই নেই”, পরিষ্কার মত তার। বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনী পরিবেশে এখনও পর্যন্ত ভারত-বিরোধিতার কোনো আবহ তেমন নেই, দিল্লির দৃষ্টিতে সেটাও অত্যন্ত ইতিবাচক একটা পদক্ষেপ।
ফলে আগ বাড়িয়ে সেদেশের নির্বাচন নিয়ে অতি-সক্রিয়তা দেখিয়ে ওই পরিবেশ বিগড়ে দেয়াও কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এটাও হয়তো ভারত মাথায় রাখছে। পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তীর কথায়, “আমি তো বলব এটা পারস্পরিক সম্পর্কের একটা ম্যাচিওরিটি, যেখানে অন্য দেশকে নিজের নির্বাচনে ডোমেস্টিক ইস্যু বানানোর কোনো দরকার পড়ে না। “হ্যাঁ, দুদেশের মধ্যকার অভাব-অভিযোগ বা অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে অবশ্য দুদেশের সরকারকেই ডিল করতে হবে। সেটা কিছুটা হয়নি, কিছুটা আবার হয়েছেও।” “যেমন স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছে, সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়েছে। প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, আধুনিকীকরণের কাজও হচ্ছে। এগুলোর তো একটা সুফল দেবেই”, বলছিলেন তিনি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এই পরিণতি আর ভোটে বিএনপির যোগদান, এই দুটো ফ্যাক্টরই আসলে পাঁচ বছর আগের তুলনায় ভারতের অবস্থানকে আজ পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবকে পাঠানো তো দূরস্থান, বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন নিয়ে তাই এখনও কোনো বিবৃতি দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি ভারত।