এশিয়ান বাংলা, নরসিংদী : নরসিংদীর রায়পুরায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের পৃথক সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৪ জন। প্রতিপক্ষের গুলিতে তারা নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরো ১৬ জন। গতকাল শুক্রবার ভোরে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় তোফায়েল রানা নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। আহত হয় কমপক্ষে ৬ জন। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বেলা ২টার দিকে নীলক্ষায় গোপীনাথপুর, কান্দাপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে ৩ জন নিহত হয়।
এরা হলো- সোহরাব মিয়া ও মরম আলীসহ অজ্ঞাত আরো ১ জন। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১০ জন। আহতরা রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাঁশগাড়ির সংঘর্ষে নিহত ছাত্রের নাম তোফায়েল রানা (১৬)। সে একই গ্রামের আবদুল্লাহ ফকিরের ছেলে এবং স্থানীয় বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্থানীয় রাজনীতিতে সে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় চেয়ারম্যান সিরাজুল হকসহ একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
এরই জের ধরে শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বাবুল মেম্বারের সর্মথক ও প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় পেয়েরাকান্দী গ্রামের সফর আলীর দুই ছেলে সুমন মিয়া (২৮), মামুন মিয়া (২৫) ও মির্জাচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সুমন (২৬)সহ ৬ জন। তাদের নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালে নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বলেন, ঝগড়া-বিবাদের জন্য এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নরসিংদী চলে এসেছি। ছেলে পরীক্ষার খোঁজ খবর নিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এভাবে আর কত বাবার বুক খালি হলে থামবে বাঁশগাড়ির এই রক্তক্ষয়ী বিবাদ তা আমাদের জানা নেই। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে অপর ঘটনায় নীলক্ষার গোপীনাথপুর বীরগাঁও কান্দাপাড়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সোহরাব মিয়া (৩০) মরম আলী (৪৫)সহ অজ্ঞাত আরো এক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত আরো ১০ জন। শুক্রবার বেলা ১টার দিকে বীরগাঁও কান্দাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহরাব মিয়া একই এলাকার ওসমান মিয়া ও মরম আলী নাসির উদ্দিনের ছেলে। নিহত অপর ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নীলক্ষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় তাজুল ইসলাম সরকারের সমর্থকরা। আবদুল হক সরকার ও তাজুল ইসলাম সরকার দু’জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। হামলার একপর্যায়ে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব মিয়া, মরম আলী ও অজ্ঞাত ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা য়ায়। এতে করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিন উল কাদির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পৃথক দুইটি ঘটনাই আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ঘটেছে।