এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তখন বলা হচ্ছিল নিয়মিত চেকআপের অংশ হিসেবেই তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার রাতে চিকিৎসা শেষে তিনি হাসপাতাল ছাড়েন। হাসপাতাল ছাড়লেও বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় ফিরেননি। হাসপাতাল থেকে তিনি কোথায় গেছেন তা কেউ বলতে পারছে না। দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দলীয় মনোনয়নের চাপ সামলাতে তিনি বিশ্রামে আছেন।

তবে বিশ্রাম নিতে হলে বাসার বাইরে কেন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক হচ্ছে খোদ নেতাকর্মীদের মাঝেই। সোমবার রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বীকার করেন এরশাদ হাসপাতাল থেকে প্রেসিডেন্ট পার্কে যাননি।

তিনি কোথায় আছেন তাও তিনি জানাতে পারেননি। গত রাতে বারিধারার ১০ দূতাবাস রোডের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ওই বাসার নিরাপত্তা রক্ষী জানান ভেতরে কেউ নেই। পার্টি প্রেসিডেন্ট এরশাদ কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমি জানি না। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা দলীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। শুধু নির্দিষ্ট ব্যাক্তিরাই তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন। জাতীয় পার্টির শীর্ষ স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘দলের মনোনয়ন এবং সরকারের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এরশাদ অত্যন্ত চাপে রয়েছেন।’ এরশাদ আওয়ামী লীগের কাছে একশ’ আসন দাবি করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারি দল নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এই অবস্থায় গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। শেষ মুহুর্তে ওই বৈঠকটি স্থগিত হয়ে যায়। তবে এর কারণ জানা যায়নি। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, তারা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে খুবই চাপে রয়েছেন। কারণ কেউই নিশ্চিত না জাতীয় পার্টি কতটি আসন পাবে, কোথায় পাবে।

দলীয় সূত্র বলছে, মঙ্গলবার থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা। পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ নিজেই এই সাক্ষাৎকার নেবেন বলে আগে জানানো হয়েছিল। আগে এ সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও এরশাদের অসুস্থতার কারণেই তা পেছানো হয়। তারিখ পেছানো হলেও আজকের নির্ধারিত সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে এরশাদ থাকতে পারবেন কিনা তা গতরাতেও দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়নি। বরং এ বিষয়ে নেতারা নীরব থাকার অবস্থান নিয়েছেন। পার্টি চেয়ারম্যান কোথায় আছেন বা তার শারীরিক অবস্থা কেমন তা জানতে গতকাল দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা, জোটে অবস্থান নির্ধারণ এবং আসন দরকষাকষির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এরশাদের অসুস্থতা ও অন্তরালে থাকাকে ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে।

দলীয় নেতাকর্মীরাই বলছেন, হঠাৎ কোনো চাপে পড়ে তিনি অন্তরালে অবস্থান নিয়েছেন নয়তো তাকে অন্তরালে রাখা হয়েছে। আজকের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে তিনি অংশ না নিলে তার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। দলীয় একটি সূত্র বলছে, এরশাদ উপস্থিত হতে না পারলে পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরসহ সিনিয়র নেতারা এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।

উল্লেখ্য, বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। তার এ ঘোষণার পর একপর্যায়ে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। একপর্যায়ে ‘অসুস্থ’ হয়ে তিনি সিএমএইচ এ চলে যান। মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে স্ত্রী রওশন এরশাদের। নির্বাচনের পর অবশ্য এরশাদ সবকিছু মেনে নেন। জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। একই সঙ্গে দলটির নেতারা মন্ত্রিসভায়ও যোগ দেন। বিরল নজির গড়ে একইসঙ্গে সরকার এবং বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টিকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version