এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আজ বুধবার। সারা দেশে ৩০০ রিটার্নিং এবং ৫৮১ সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। কয়েকদিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা নমিনেশন পেপার সংগ্রহ ও জমা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ-৩ ও রংপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। এছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিন ঢাকার দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা পড়েছে ৪১টি। বাকিরা আজ শেষদিনেই জমা দেবেন। এ সময় মন্ত্রীরা সরকারি গাড়ি ও পতাকা এবং এমপিরা তাদের গাড়িতে ‘এমপি স্টিকার’ ব্যবহার করতে পারবেন না। বিধি অনুযায়ী মিছিল, শোডাউন নিষিদ্ধ। কেউ যাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সব রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণমূলক এ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো সরগরম হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতিতে নানা ধরনের কৌশল নিচ্ছে। প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রেও কৌশলী অবস্থানে দুই দল। বিদ্রোহী ঠেকাতে ও প্রতিপক্ষের প্রার্থীর অবস্থান বুঝতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনেক আসনে দুই থেকে চারজন পর্যন্ত প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। একই আসনে জোটের শরিকদের পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীকেও টিকিট দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কারাগারে আটক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্যও তিনটি আসন নির্ধারণ করেছে বিএনপি। ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগের দিন ৮ ডিসেম্বর দুই জোটই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। এতে যাদের নাম থাকবে, তারাই চূড়ান্ত প্রার্থী হবেন। বাকিদের মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। এবার দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি অংশ নেয়ায় এ নির্বাচন দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। এ কারণে জয় পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলো। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনের জন্যও। শেষ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দল মাঠে থাকলে এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে কয়েক দিন ধরেই আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নমিনেশন পেপার সংগ্রহ ও জমা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার ঢাকার আসনগুলোয়ও প্রার্থিতা সংক্রান্ত কাগজ জমা দিয়েছেন কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। এ সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক দেখা গেছে। তবে এর বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। আজ শেষ দিনও মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনের শঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি ও আচরণবিধিমালার লঙ্ঘন যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সব রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।

মঙ্গলবার বিকালে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো ধরনের শোডাউন করা যাবে না। কোনো প্রার্থী পাঁচ থেকে সাতজনের বেশি লোক নিয়ে আসতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাওয়ার সময় কোনো প্রার্থী বাস বা ট্রাক মিছিল, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, মশাল মিছিলসহ কোনো ধরনের শোডাউন করতে পারবেন না। এরই মধ্যে কিছু এলাকায় এ ধরনের শোডাউনের তথ্য তারা পেয়েছেন। এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থিত কেউ হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। হেলিকপ্টার ব্যবহার করে কেউ লিফলেট বা প্রচারপত্র ছড়াতে পারবেন না। তবে রাজনৈতিক দলের প্রধান নির্বাচনী কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন।

জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পরপরই গত ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্টসহ কয়েকটি রাজনৈতিক জোট ও দলের দাবির মুখে এর চার দিন পর ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। ২ ডিসেম্বর এগুলো বাছাই করা হবে। ওই সময়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল বা গ্রহণ করা হবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তিন দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ডিসেম্বর। ভোট গ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।

জানা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইসির কাছে একের পর এক অভিযোগ করছে। এ পর্যন্ত ৯২ জন প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। ইসি সাফ জানিয়েছে, ঢালাও অভিযোগের কারণে কাউকে বদলি করবে না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। এরই মধ্যে এক এসপির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করতে আইজিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে দুই ওসিকে।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তালিকা অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০। প্রাথমিকভাবে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ১৯৯টি। ভোটকক্ষ হবে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৪০টি। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। এই ছয় আসনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২। এ ছয় আসনের ৮০০ কেন্দ্রের প্রায় ৪ হাজার ২৬৭টি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোট হবে। যদিও ইসির নিবন্ধিত বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল এবার ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।

ইসি ছাড়া কারও মিটিংয়ে যাবে না রিটার্নিং কর্মকর্তারা : রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্বাচন কমিশনের সম্মতি ছাড়া কর্মস্থলের বাইরে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইসি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত ও প্রতিপালনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছে ইসি। সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককেও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। ইসির উপসচিব আবদুল হালিম খানের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময়ে রিটার্নিং অফিসারের চাকরি নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত থাকায় ইসির সম্মতি ছাড়া তারা কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। এছাড়া সরকারের কোনো উন্নয়ন অথবা প্রশাসনিক এবং নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ব্রিফিংয়ে তাদের অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে ইসি নির্দেশ দিয়েছেন।

একদিনে ঢাকায় ৪১ মনোনয়নপত্র জমা : মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কেএম আলী আজমের দফতরে রাজধানীর ১৫টি সংসদীয় আসনের ৪০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। আর ঢাকা জেলা প্রশাসকের দফতরে জমা পড়েছে একটি। সবমিলিয়ে একদিনে ঢাকায় জমা পড়েছে ৪১টি। বেশির ভাগ প্রার্থী সশরীরে কমিশনার কার্যালয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও কেউ কেউ তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমেও জমা দিয়েছেন। তবে সরেজমিন দেখা গেছে, নমিনেশন পেপার জমা দেয়ার সময় বেশির ভাগ প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচজনকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিধান আছে। কিন্তু অনেক প্রার্থীই তা অমান্য করেছেন।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মোট ৪০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সোমবার জমা পড়েছে ১৮টি এবং মঙ্গলবার বাকি ২২টি। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির একজন প্রার্থী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) তিনজন রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, গণফোরাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনএফ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাকের পার্টি, জেএসডি (রব), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। জমা পড়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্রও। কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা যায়, ঢাকা-৪ আসনে ৩ জন, ঢাকা-৫ আসনে ২ জন, ঢাকা-৬ এ ৪ জন, ঢাকা-৭ এ ২ জন, ঢাকা-৮এ ৬ জন, ঢাকা-৯ এ ২ জন, ঢাকা-১০এ ১ জন, ঢাকা-১১ আসনে ১, ঢাকা-১২ তে ২, ঢাকা-১৩ তে ২, ঢাকা-১৪ তে ১, ঢাকা-১৫ তে ৩, ঢাকা-১৬ আসনে ২, ঢাকা-১৭ আসনে ৫ ও ঢাকা-১৮ আসনে ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা-১৬ আসনের এক প্রার্থীর তথ্য অসম্পন্ন থাকায় মনোনয়ন ফরম জমা নেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্ধারিত সময় বিকাল ৫টার পরও কেউ কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে আসেন। কিন্তু সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি কর্মকর্তারা। আজ সকাল ৯টা থেকে পুনরায় মনোনয়নপত্র গ্রহণ শুরু হবে। চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে ঢাকা-৮ এর প্রার্থী রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ভোট হতেই হবে। ঢাকা-৯ এর প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আশা করছি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রণমূলক ভোট হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বেশি লোক নিয়ে মনোনয়ন জমা প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অচরণবিধি লঙ্ঘন করিনি। নিয়ম মেনেই মনোনয়ন জমা দিতে এসেছি। আমার আসনে প্রতি ওয়ার্ড থেকে একজন করে লোক এসেছেন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেএসডির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, আমরা আপাতত জোটগতভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছি না। দলীয়ভাবে জমা দেয়া হচ্ছে। পরে বসে এগুলো সমন্বয় করা হবে। তিনি বলেন, আজ (মঙ্গলবার) আমি ঢাকা-১৮ তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। কাল (বুধবার) ফেনী-৩ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেব। ঐক্যফ্রন্ট আমাকে যে আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সেটা রেখে অন্যটি প্রত্যাহার করে নেব। আমার দৃঢ বিশ্বাস আমাকে ফেনী-৩ এ মনোনয়ন দেয়া হলে আসনটি ঐক্যফ্রন্টকে উপহার দিতে পারব।

এ ছাড়া দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পারেনি। আবার বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলছে না। সেখানে কমিশন কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। তা ছাড়া মনোনয়ন নিয়ে যে বাণিজ্য শুরু হয়েছে এবং দল-বদলের সে স্রোত চলছে সেটি নির্বাচনী পরিবেশের জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন একটি শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে তাদের মেরুদণ্ড সোজা করে সব কিছু করবে।

যারা মনোনয়নপত্র জমা দিলেন : ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী ও ঢাকা-১৫ আসনে প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১২ আসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে তার ভাই আকরামুজ্জামান খান, ঢাকা-৮ এ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, গণতান্ত্রিক জোট মনোনীত প্রার্থী ঢাকা-১৩ আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী আহসান হাবীব লাভলু, ঢাকা-১৫ আসনে আহমেদ সাজেদুল হক রুবেল ও ঢাকা-৮ আসনে সিপিবির প্রকৌশলী শম্পা বসু, ঢাকা-৭ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মাসুদ পাশা ও ঢাকা-৫ আসনে এনপিপির হাবীবুর রহমান মুকুল, ঢাকা-১৮ আসনে জাসদ (রব) শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ঢাকা-১৭ আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের (বাসদ) প্রার্থী এসএম আহসান হাবীব, গণফোরামের আহমেদ আলী শেখ, ঢাকা-১৮ আসনে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা-১০ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুল আওয়াল, ঢাকা-৮ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী আবদুস সামাদ, ঢাকা-৯ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. মানিক মিয়া, ঢাকা-৮ এ এমএ ইউসুফ, জগদীশ বড়ুয়া, ঢাকা-১৬ সিদ্দিকুর রহমান ও আলী আহমেদ, ঢাকা-১৪ কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ঢাকা-১৩ মুরাদ হোসেন, ঢাকা-১২ সৈকত আলী, ঢাকা-১১ আমিনুল ইসলাম ও আবদুল আউয়াল, ঢাকা-১৮ আনোয়ার হোসেন, ঢাকা-১৭ আমিনুল হক তালুকদার, আলী হায়দার ও আনিসুজ্জামান খোকন, ঢাকা-৬ মনোয়ার হোসেন, আখতার হোসেন, আবু তাহের ও আহমেদ আলী শেখ প্রমুখ।

এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মঙ্গলবার একজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নুরুল ইসলাম নামের ওই প্রার্থী ঢাকা-২০ আসন থেকে জাকের পার্টির হয়ে নির্বাচন করতে চান। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে তার মনোনয়নপত্র জমা দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র জমা : আখাউড়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শামসুজ্জামানের কাছে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এ মনোনয়পত্র জমা দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও যুবলীগের আহ্বায়ক তাকজিল খলিফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ভূঁইয়া প্রমুখ।

রামগতিতে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আসম রব : রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি জানান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সভাপতি, ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা আসম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল হকের কাছে মঙ্গলবার দুপুরে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় দলের সহসভাপতি তানিয়া রবসহ রামগতি ও কমলনগর উপজেলা জেএসডির নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন।

ভেড়ামারায় মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ইনু : ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ভেড়ামারা উপজেলার সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. সোহেল মারুফের কাছে এ মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সিলেটে ৬ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা : সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের ৪টি আসনে ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা সোম ও মঙ্গলবার সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারা হলেন- সিলেট-১ (সদর-সিটি কর্পোরেশন) আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও ইসলামী ঐক্যজোটের ফয়জুল হক, সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী ও বিএনএফের মো. মোশাহিদ খান, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে খেলাফত মজলিসের জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসাইন ও সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) এমএ মতিন।

চট্টগ্রামে সংগ্রহ ২০ জনের : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে বিএনপির ৪ জনসহ ২০ প্রার্থী মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে এসব মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ২৫৮টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version