এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : এসএসসি পরীক্ষার্থী শারমিনের বাবা নেই। একমাত্র ভাইটা ছোট। মা ঝিয়ের কাজ করেন। তার এই রোজগারেই চলে তিনজনের সংসার ও দুই ভাইবোনের লেখাপড়া। শারমিন লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবে। সংসারে সচ্ছলতা আনবে। তার মাকে আর ঝিয়ের কাজ করতে দেবে না। এমনই স্বপ্ন দেখতো হতভাগা মেয়েটি।

কিন্তু তার সেই স্বপ্ন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল ঘাতকের দায়ের কোপে। এলাকার এক বখাটের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় জীবন দিতে হলো তাকে।

মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন সায়েদাবাদের গোপীবাগ এলাকায়। এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে ঘাতককে হাতেনাতে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে স্থানীয় জনতা। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে ঘাতক সোহেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ হত্যার কাজে ব্যবহৃত দা’ জব্দ করেছে। সূত্র জানায়, সায়েদাবাদ এলাকার কাজি আরেফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
শারমিন আক্তার (১৬) এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। বেশ কয়েকদিন আগে এলাকার এক বখাটে যুবক সোহেল (২৬) তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শারমিন।

এরপরও তার পিছু ছাড়েনি বখাটে। পথিমধ্যে তাকে উত্ত্যক্ত করতো। অবশেষে শারমিনের পক্ষ থেকে প্রেমের সাড়া না পেয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে সোহেল। গতকাল শারমিনের স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠান শেষ করে বিকাল ৩টার দিকে সে ওয়ারীর কেএম দাস লেনে তাদের বাসায় ফিরছিল। গোপীবাগ সুপার মার্কেটের কাছে পৌঁছালে সোহেল তার পথরোধ করে ধারালো দা’ দিয়ে ঘাড়ে কোপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় শারমিন। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

এ ঘটনার পর স্থানীয় জনতা বখাটে সোহেলকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। এতে সে আহত হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, হত্যার দায় স্বীকার করে বখাটে সোহেল জানায়, সায়েদাবাদ এলাকায় কাজী আরেফ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই তার দোকান রয়েছে। সেই সূত্রে ওই ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের। বিভিন্ন সময় তার জন্য অনেক টাকা খরচ করেছে সোহেল। হঠাৎ করেই কিছুদিন যাবৎ তাদের সম্পর্ক খারাপ যেতে শুরু করে।

ওই স্কুলছাত্রী সোহেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করে। সেই প্রতিশোধ নিতে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে দা দিয়ে আঘাত করে। এ ব্যাপারে ওয়ারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ জানান, মেয়েটির বাবা নেই। দুই ভাইবোনের মধ্যে সে বড়। এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার। কিছুদিন আগে এলাকার বখাটে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। শারমিন ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যা করে। তিনি জানান, মেয়েটির ঘাড়ে একটি কোপ দিয়েছে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা গেছে সে। তিনি বলেন, গণপিটুনিতে আহত বখাটে সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যার কাজে ব্যবহৃত দা-টি জব্দ করা হয়েছে। প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি না জানতে চাইলে এসআই হারুন বলেন, এমন কোনো কথা এখনো জানা যায়নি। ছেলেটি বখাটে হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, শারমিনের বাবার নাম মৃত আবদুস সাত্তার। ওয়ারীর কেএম দাস লেনে তাদের বাসা। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version