এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৬ টিতে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। মহাজোটের প্রার্থীদের জন্য ওই আসনগুলো রেখেছে ক্ষমতাসীন দল। অন্যদিকে ৫টি আসন ছাড়া বাকি সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি। দশম সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২১০টি আসনে প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন জমা করেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের জন্য এবার প্রায় ৫ শতাধিক মনোনয়ন জমা পড়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, গত বুধবার ছিল মনোনয়ন জমার শেষ দিন। ২রা ডিসেম্বর মনোনয়ন বাছাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ই ডিসেম্বর।

৩০শে ডিসেম্বর এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সারা দেশে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে প্রায় ৩ হাজার ৬৫টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। তবে গত বুধবার মনোনয়ন জমার শেষদিনে ইসি সচিব জানান মোট মনোনয়ন জমা হয়েছে ৩ হাজার ৫৬টি। গতকাল দিনভর মনোনয়নের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ইসি কর্মকর্তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক প্রার্থী দলের চিঠি ছাড়াই মনোনয়ন জমা দিয়েছে। পরবর্তীতে চিঠি সংযুক্ত করায় তাদের হিসাবের মধ্যে আনতে হয়েছে। ইসির সরবরাহকৃত নতুন হিসাব অনুসারে, ৫ আসন ফাঁকা রেখে ২৯৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। আসনগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল-৮, মৌলভীবাজার-২, কুমিল্লা-৭, লক্ষ্মীপুর-৪ ও চট্টগ্রাম-১৪।

এসব আসনে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০দলীয় জোটের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সম্মানে এ আসনগুলোতে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। টাঙ্গাইল-৮ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মৌলভীবাজার-২ আসনে ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, কুমিল্লা-৭ আসনে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব এবং চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ মনোনয়ন দাখিল করেছেন। অন্যদিকে ৩৬ আসনে প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

আসনগুলো হচ্ছে- ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-৩, নীলফামারী-৪, লালমনিরহাট-৩, রংপুর-১, রংপুর-৩, কুড়িগ্রাম-২, গাইবান্ধা-১, বগুড়া-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, রাজশাহী-২, কুষ্টিয়া-২, বরিশাল-৩, বরিশাল-৬, পিরোজপুর-২, পিরোজপুর-৩, ময়মনসিংহ-৪, ময়মনসিংহ-৮, কিশোরগঞ্জ-৩, মুন্সীগঞ্জ-১, ঢাকা-৪, ঢাকা-৬, ঢাকা-৮, নারায়ণগঞ্জ-৫, সুনামগঞ্জ-৪, সিলেট-২, মৌলভীবাজার-২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ফেনী-১, ফেনী-৩, লক্ষ্মীপুর-২, চট্টগ্রাম-২ ও চট্টগ্রাম-৫।

ইসি’র জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ ২৮১টি, বিএনপি ৬৯৬টি, জাতীয় পার্টির ২৩৩টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ১৩৫৭টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে মোট ২৫৬৭টি। এর বাইরে স্বতন্ত্র ৪৯৮টি মনোনয়নপত্র মিলিয়ে মোট সংখ্যা ৩০৬৫। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারার আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা এখনো হয়নি। তা চূড়ান্ত হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ই ডিসেম্বরের পর জানা যাবে, জোটের কোন দল কতটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

বিএনপি এবার প্রায় প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থীকে প্রত্যয়ন দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করিয়ে রেখেছে। দলটির নেতারা বলছেন, কোনো কারণে কারও প্রার্থী হওয়া আটকে গেলে বিকল্প প্রার্থী ভোট করবেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়েও বিএনপির সমঝোতা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এই জোটেও কোন দল কতটি আসনে লড়বে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। নিবন্ধিত ৩৯টি দলের নামেই মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অন্য দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্রদের নামে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে জেপির ১৭টি, সাম্যবাদী দলের ৩টি, গণতন্ত্রী পার্টির আটটি, ন্যাপের ১৪টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩টি, জাসদের ৫৩টি, তরীকত ফেডারেশনের ২০টি এবং বিকল্পধারার ৩৭টি। এ ছাড়া জাকের পার্টি ১০৮টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। ২০দলীয় জোটের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে গণফোরামের ৬১টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩৭টি, জেএসডির ৫১টি, এলডিপির ১৫টি, বিজেপির ১১টি, এনপিপির ৯০টি, জাগপার ৬টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ৪৯টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ১৫টি, কল্যাণ পার্টির ৫টি।

অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সিপিবির ৭৭টি, বাসদের ৪৯টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৩০টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোটের ৩২টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ১২টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৯৯টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ২১টি, খেলাফত মজলিসের ১২টি, বিএমএলের ১৭টি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ১টি, বিএনএফের ৭১টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দশম সংসদ নির্বাচনে ১২টি দল অংশ নেয়। নবম সংসদে ৩৮, অষ্টম সংসদে ৫৫, সপ্তম সংসদে ৮১, ষষ্ঠ সংসদে ৪২, পঞ্চম সংসদে ৭৫, তৃতীয় সংসদে ২৮, দ্বিতীয় সংসদে ২৯ এবং প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নেয়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version