এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নিজের চেয়ে স্ত্রীর নামেই সম্পদ বেশি। তার মাসিক আয় ৯ লাখ ৩ হাজার ৫১৭ টাকা। ব্যাংকে ঋণ আছে ২ কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৬৩৫ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি রংপুর-৩ আসন ও ঢাকার একটি আসন থেকে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এরশাদ তার হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাশ বলে উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুসারে, এরশাদ বর্তমানে ৬টি ফৌজদারি মামলার আসামি। দুটি বিচারাধীন, চারটি স্থগিত।

অতীতে ২৭টি ফৌজদারি মামলা ছিল। যার মধ্যে ১৩টিতে খালাস, ৫টি অব্যাহতি, একটিতে তিন মাসে সাজাভোগ ও জরিমানা দিয়ে নিষ্পত্তি পেয়েছেন। চারটিতে ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। মামলাগুলোর বেশিরভাগই দুর্নীতির অভিযোগে করা হয়েছিল। পেশার বিবরণীতে তিনি নিজেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এরশাদ স্ত্রীর নামেই বেশি সম্পদ গড়েছেন: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বিশেষ দূতের সম্মানি ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৯৬ টাকা, সংসদ সদস্যের সম্মানী ১২ লাখ ৬০ হাজার, ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সম্মানী ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা বছরে আয় করেন। তার মাসিক আয় ৯ লাখ ৩ হাজার ৫১৭ টাকা ১৭ পয়সা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে নিজ হাতে নগদ ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা ও স্ত্রীর হাতে নগদ আছে ২৬ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা রয়েছে বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা। স্ত্রীর নামে জমা আছে- সোনালী ব্যাংকে ৪৭ লাখ ৯৮ হাজার ২২ টাকা এবং ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৯১ টাকা। কোম্পানি শেয়ার আছে নিজের নামে ৪৪ কোটি ১০ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকার শেয়ার আছে। নিজের নামে ৯ কোটি ২০ লাখ টাকার এফডিআর, ডিপিএস ৯ লাখ টাকা আছে। স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকার এফডিআর, সেভিং সার্টিফিকেট ৬০ লাখ টাকা এবং বিনিয়োগ আছে ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার। স্ত্রী ১০০ ভরি সোনা আছে। নিজের নামে ৬০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র আছে। আর স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকা। নিজ নামে ব্যবসায় মূলধন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১৫৪ টাকা ও জমি বিক্রয় ২ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকার দেখিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে দেখানো হয়েছে, নিজের নামের কৃষি জমি না থাকলেও স্ত্রীর নামে রংপুরে ৩৩ লাখ টাকার ৫০ শতাংশ এবং ঢাকার পূর্বাচলে ১৮ লাখ টাকার সাড়ে ৭ কাঠা জমি আছে। বনানীতে নিজের নামে শপিং কমপ্লেক্স ৭৭ লাখ টাকার আছে। বারিধারায় ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট, বনানীতে ৪৯ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট এবং গুলশানে ৬২ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট আছে। আর স্ত্রী নামে গুলশানে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ও ফ্ল্যাট গুলশান মডেল টাউনে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার জমি দেখানো হয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ঋণ আছে ২ কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৬৩৫ টাকা।

নির্বাচনী বিধি অনুসারে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে হলফনামায় কোনো প্রার্থী তথ্য প্রদান না করলে অথবা কোনো অসত্য তথ্য প্রদান করলে বা হলফনামায় উল্লিখিত কোনো তথ্যের সমর্থনে যথাযথ সার্টিফিকেট, দলিল ইত্যাদি দাখিল না করা অপরাধ। এ ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে অথবা আদেশের ১৪ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কোনো ব্যক্তির আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত তদন্ত করে মনোনয়নপত্র বাতিল করতে পারবেন।

রাশেদ খান মেননের স্ত্রী কোটিপতি: বাম নেতা হিসেবে পরিচিত রাশেদ খান মেননের গত ১০ বছরে বিপুল উন্নতি হয়েছে। নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। তার উন্নতির পাশাপাশি তার স্ত্রীরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তিনি সম্পদের পরিমাণে শূন্য থেকে হয়েছেন কোটিপতি। রাশেদ খান মেননের হলফনামার তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০ বছরে মেননের বাৎসরিক আয় বেড়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকার বেশি। অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৫১ লাখ ৮৮ হাজার টাকার বেশি। স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে তার বাৎসরিক আয় প্রায় চারগুণ ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে তিনগুণের বেশি। অপরদিকে স্থাবর সম্পত্তির দিক থেকে গত ১০ বছরে তার স্ত্রী হয়েছেন কোটিপতি। নবম ও দশম নির্বাচনী হলফনামায় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ টাকা। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী মেননের স্ত্রীর নামে একটি বাড়ি রয়েছে। এটির মূল্যই ১ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ২৪০ টাকা দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে রাশেদ খান মেননের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ২২ গুণ। অর্থাৎ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তা ৫৬ লাখ ৬২ হাজার ৪৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৩০ টাকা। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা গেছে একটি টয়োটা জীপ প্রাডো গাড়ি রয়েছে রাশেদ খান মেননের। গত দশ বছরে তার যানবাহনের সংখ্যা কমেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তার ব্যবহৃত গাড়িটির দাম ৬১ লাখ ৮৫ হাজার। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার টয়োটা জীপ প্রাডো এবং টয়োটা স্টেশন ওয়াগন মডেলের দুইটি গাড়ি ছিল। এগুলোর মূল্য যথাক্রমে ৬০ লাখ ও ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তার গাড়ি ছিল দুইটি। এর মধ্যে ৫ লাখ মূল্যের টয়োটা করোলা গাড়ি ছিল একটি এবং ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের অপর একটি গাড়ি ছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় রাশেদ খান মেনন মোট আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭২৪ টাকা। তার স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও অস্থাবর সম্পত্তি ছিল টাকার পরিমাণে ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। হলফনামা অনুযায়ী তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং তাদের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ১০ বছর পর রাশেদ খান মেননের ওপর নির্ভরশীলদের আয় ও অস্থাবর সম্পত্তি চলে এসেছে শূন্যের কোটায়। নবম-দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় পার্থক্যে দেখা যায়, মেননের নিজ নামে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৩ গুণ। তবে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী এই বাম নেতার অস্থাবর সম্পত্তি কমেছে ১১ লাখ ১২ হাজার টাকার কিছু বেশি। একইসঙ্গে নবম জাতীয় সংসদের হলফনামা অনুযায়ী তার স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও তার পাঁচ বছর পরে তার নিজ নামে স্থাবর সম্পত্তি হয়েছিল ৩০ লাখ টাকার। একাদশ সংসদের নির্বাচনের সময় আরও ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে তার। নবম ও দশম নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তার ব্যবসা থেকে আয় বেড়েছিল দ্বিগুণ এবং পত্রিকায় কলাম লেখা বাবদ আয় বেড়ে হয়েছিল প্রায় সাতগুণ। এর মধ্যে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তিনি ব্যবসা থেকে আয় করতেন ৩ লাখ টাকা এবং পত্রিকায় কলাম লিখে আয় করতেন ২৫ হাজার ৭২৪ টাকা। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী ব্যবসা থেকে তার আয় ৬ লাখ টাকা এবং পত্রিকায় কলাম লিখে তার আয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী তিনি ব্যবসা থেকে আর আয় করেন না। হাতে নগদ টাকার পরিমাণও বেড়েছে রাশেদ খান মেনন ও তার স্ত্রীর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী মেননের কাছে নগদ অর্থ ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার এবং তার স্ত্রীর কাছে ছিল ৩০ হাজার টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী তাদের হাতে নগদ টাকা রয়েছে যথাক্রমে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ১৪ টাকা ও ৭ লাখ ৯৬ হাজার ২২০ টাকা।

আয় কমেছে কামাল মজুমদারের: ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদারে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাশ। পেশা ব্যবসা, কৃষি, মৎস্য খামার। বার্ষিক আয় এক কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দাখিলনামা হলফনামার সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় যে তার আয় কমেছে প্রায় দুই লাখ টাকা। বর্তমানে তার কৃষি খাত থেকে আয় ৩৩ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া ৭৪ লাখ, ব্যবসা থেকে ২৬ লাখ। শেয়ার সঞ্চয়পত্র ব্যাংক আমানত থেকে ৪ হাজার ৪৯৯ টাকা। সংসদ সদস্য সম্মানী ২৩ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্বপদের মধ্যে নগদ টাকা ২২ লাখ ৩০ হাজার, ব্যাংকে জমা ৫১ লাখ ৮ হাজার, ব- ঋণপত্র, শেয়ার এক কোটি ৭৫ লাখ। অস্ত্র-শর্ট গানসহ ৫ কোটি ২১ লাখ টাকার অস্ত্র। স্থাবর সম্পদ কৃষি জমি ২৯ লাখ টাকা, বাড়ি ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। দায়দেনা অগ্রীম নেওয়া ৯৪ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে তার বাৎসরিক আয় ১ কোটি ২১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩০ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী উল্লেখ করেননি তিনি। এছাড়া, অন্যান্য খাত থেকে ১৪ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। ২০০৮ সালে তার আয় ছিল প্রায় ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় দেখিয়েছেন ১৬ হাজার ৮২৫ টাকা। তার ও স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকা। ২০১৩ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৪ লাখ টাকা। তার নামে মামলা রয়েছে ২২টি।

হাজী সেলিমের যত আয়-সম্পদ: ঢাকা ৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী সেলিম। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নবম শ্রেণী পাশ। পেশা ব্যবসা ও রাজনীতি। বার্ষিক আয় ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ১ কোটি ১৬ লাখ, সম্মানী ভাতা ৫৭ লাখ ৩ হাজার, নির্ভরশীলদের আয় বাড়ি ভাড়া ১৯ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ৭ লাখ ২৪ হাজার অন্যান্য সম্মানী ১৯ লাখ ২৫ হাজার। নগদ টাকা ২ লাখ। ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এক কোটি ৩৪ লাখ। বন্ড, ঋণপত্র, কোম্পানি শেয়ার ও অন্যান্য ৪৬ কোটি ১১ লাখ। অন্যান্য ব্যবসা মূলধন ৪ কোটি ৪২ লাখ। স্ত্রীর নামে নগদ টাকা দুই কোটি ৯ লাখ, নির্ভরশীলদের নামে নগদ টাকা দুই কোটি ৮০ লাখ, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা তিন কোটি ৭৯ লাখ, নির্ভরশীলদের নামে ২ কোটি ৩ লাখ। বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ার স্ত্রীর নামে ১৬ কোটি ৫৯ হাজার, নির্ভরশীলদের নামে ১১ কোটি ৯ লাখ। স্ত্রীর নামে অন্যান্য ব্যবসা মূলধন রয়েছে ৯৬ লাখ, নির্ভরশীলদের নামে তিন কোটি ৮৭ লাখ। স্থাবর সম্পত্তি ভবন, ১৮ কোটি ৪৭ লাখ। ইসিতে দেয়া হলফনামায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে হাজী সেলিমের বার্ষিক আয় ছিল বাড়ি ভাড়া থেকে ৫২ লাখ ৪১ হাজার ৪৮৮ টাকা, ব্যবসা থেকে ১ কোটি ৬০লাখ ১৫ হাজার ৭৬২ টাকা, শেয়ার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৮ টাকা, চাকুরী থেকে ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া নির্ভরশীলদের বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১০ লাখ ২২ হাজার ৬২৯ টাকা এবং চাকুরী থেকে আয় ২৬ লাখ ৫১ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া ২০১৩ সালে হাজী সেলিমের নগদ টাকা ছিল ৫ লাখ ২০ হাজার ৩১৬ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮ টাকা, বন্ড ও স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত নয় এমন শেয়ার ২৬ কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা, পোস্টাল সেভিংস ও সঞ্চয়পত্রে আমানত ৫০ লাখ টাকা, বাস-ট্রাক ও মটরগাড়ি ২১ লাখ ২৬ হাজার ৫১৪ টাকা, স্বর্ণ ও অন্যান্য অলংকার ১ লাখ ৮ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ২ লাখ ৮ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ ১লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১ কোটি ৬৪ লাখ ১৫ টাকা, বন্ড ও স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত নয় এমন শেয়ার ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, পোস্টাল সেভিংস ও সঞ্চয়পত্রে আমানত ১০লাখ টাকা, বাস-ট্রাক ও মটরগাড়ি ৪৩ লাখ ৭৯ হাজার ২১৫ টাকা, স্বর্ণ ও অলংকার ২ লাখ টাকা, আসবাবপত্র ১১ লাখ টাকা।

হাবিবুর রহমান মোল্লার আয় বেড়েছে ১৪ গুণ
৫ বছরের ব্যবধানে ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮৮ গুণ বা ১ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮৬৩ টাকা। বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে এই আয় বেড়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এসময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমাকৃত অর্থের পরিমাণ কমেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, হাবিবুর রহমান মোল্লা ও তার নির্ভরশীলদের বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় হয়েছিল ১০ লাখ ৯ হাজার ৮৬৪ টাকা। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার ও তার নির্ভরশীলদের বাড়ি, এপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ ৪১ হাজার ৭২৭ টাকা। এর মধ্যে হাবিবুর রহমান মোল্লার ভাড়া বাবদ আয় হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৬ টাকা এবং তার নির্ভরশীলদের আয় হয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ৮১১ টাকা।

শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি হলেও রাজনীতি ও সমাজ সেবাই পেশা হাবিববুর রহমান মোল্লার। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, এমপি হিসাবে তার সর্বমোট আয় হয়েছে ২৩ লাখ ২২ হাজার ৬২৫ টাকা। এর মধ্যে পারিতোষিক (করযোগ্য) আয় ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ভাতাদি (কর মুক্ত) আয় ১৬ লাখ ৬২ হাজার ৬২৫ টাকা। এছাড়া ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ ৩০ জুন ২০১৮ শেষে হাবিবুর রহমান মোল্লার আয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৯৮ টাকা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, হাবিবুর রহমান মোল্লার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১২ লাখ ৪৭ হাজার ২৫০ টাকা। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী (৩০ নভেম্বর ২০১৩), তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৭ দশমিক ৫০ টাকা। এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, হাবিবুর রহমান মোল্লার ২ লাখ ৮১ হাজার ৯৭৯ টাকার নগদ অর্থ রয়েছে। পক্ষান্তরে তার স্ত্রীর নিকট ৩৪ লাখ ৫ হাজার ১০৫ টাকার রয়েছে।

এমপি হলেও গত ৫ বছরে হাবিবুর রহমান মোল্লার স্বর্ণ ও অন্যান্য ধাতু ও পাথর নির্মিত অলঙ্কারাদি, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র বাড়েনি। দশম সংসদের হলফনামা ও একাদশ সংসদের হলফনামায় একই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, হাবিবুর রহমান মোল্লার ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে, যার মূল্য ২৫ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। বৈবাহিক উপহার হওয়ায় মূল্য জানা নাই বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া হাবিবুর রহমান মোল্লার টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান ও ওভেনের মূল্য ৮০ হাজার টাকা ও আসবাবপত্রের মূল্য ৪০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

মেয়ে ও বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নিকট দায়: তিন মেয়ের নিকট থেকে ৪০ লাখ টাকা দায় রয়েছে হাবিবুর রহমান মোল্লার। মেয়ে আছিয়া খাতুনের নিকট থেকে ১৫ লাখ টাকা, মোরশেদা হাবিবের নিকট থেকে ১৫ লাখ টাকা ও শিরিন রহমানের নিকট থেকে ১০ লাখ ধার করেছেন। এছাড়া মতিউর রহমান নামক এক ব্যক্তির নিকট থেকে সুদবিহীন ঋণ হিসাবে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। ফ্যাক্টরি বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ভাড়াটিয়া ইমপ্রেস ফ্যাশন লিমিটেড থেকে অগ্রীম ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬০ টাকা গ্রহণ করেছেন ও ফ্যাক্টরি বিল্ডিং নির্মাণে বাকিতে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করেছেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version