এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জীবন আহমেদ তাবলীগ জামাতের বিবদমান দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় ধর্মীয় জমায়েতস্থল রক্তাক্ত হয়েছে মুসল্লিদের রক্তে। রক্তাক্ত হামলা ও সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ ও নির্বাচন কমিশন থেকে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর এ ঘটনা ঘটলো। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে এক মুসল্লি নিহত হন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সড়ক অবরোধ করায় বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক করেন কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণ এখন প্রশাসনের হাতে থাকবে।
ঘটনার পর তাবলীগ জামাতের মারকাজ কাকরাইল মসজিদেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে দুপুর পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই পক্ষকে বিকালের মধ্যেই মাঠ থেকে বের করে দেয়। অবস্থা স্বাভাবিক হলে বিকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘদিন থেকে মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও জুবায়ের হাসানের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। চলমান বিরোধের মধ্যে মাওলানা জুবায়ের সমর্থকরা হামলা সংঘর্ষের আশঙ্কা করে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেয়। এ চিঠির প্রেক্ষিতে শুক্রবার ইসি স্থানীয় প্রশাসনকে ইজতেমা মাঠে যে কোনো ধরনের জমায়েত বন্ধ রাখতে বলে। এ নির্দেশ দেয়ার পরের দিনই রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ হলো। সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির নাম ইসমাইল মণ্ডল (৭০)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধারণা, ঘটনার সময় তাকে বাঁশ জাতীয় কোনো লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। ফলে ঘটনাস্থলেই ইসমাইল মণ্ডলের মৃত্যু হয়। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে ইজতেমা এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ময়দান ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
এদিকে টঙ্গীর সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে যায় রাজধানীতেও। দুই পক্ষের মধ্যে এ ঘটনার জেরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন তাবলীগ জামায়াতের জুবায়েরপন্থিরা। ফলে খিলক্ষেত থেকে উত্তরা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল।
অপরদিকে দেওবন্দ কওমিপন্থি তাবলিগ মুরব্বি মো. মাহফুজ জানান, ৭ই ডিসেম্বর থেকে ১১ই ডিসেম্বর তাদের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ ঘোষণা শুনে সাদপন্থিরা ৩০শে নভেম্বর থেকে ৪ঠা ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে উভয়পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দু’পক্ষকে ডেকে নিয়ে নির্বাচনের আগে জোড় ইজতেমা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়। সেখানে উভয়পক্ষই ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। তারপরও সাদপন্থি কয়েক হাজার তাবলীগ মুসল্লি গতকাল ভোরে জোড় ইজতেমা করার জন্য ময়দানে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছিল। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. এমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইজতেমা ময়দান এলাকায় র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার থোয়াই অংপ্রু মারমা বলেন, ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে। তবে মুসল্লিদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। এদিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর র্যাব-১ এর সিইউ লে. কর্নেল সারোয়ার মানবজমিনকে বলেন, ইজতেমা মাঠে সকাল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করে। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমরা ঘটনাস্থলে আসার পর তাদের দু’পক্ষকেই বুঝিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করি।
হাসপাতালে আহতদের ভিড়: সংঘর্ষের ঘটনায় টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আহতের অনেকের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। প্রত্যেকেরই কারো মাথা ফাটা, কারো হাতকাটা, আবার কারো শরীরের বিভিন্ন অংশ আঘাতে কেটে যাওয়ার চিহ্ন লক্ষ্য করা গেছে। শুধু তাই নয়, সংঘর্ষে আহত অনেককে হাসপাতালে ব্যথায় কাতরাতে দেখা যায়। সাভার থেকে আসা সাদপন্থিদের মধ্যে ফজলুর রহমান নামের এক মুসল্লি বলেন, আমরা সকাল বেলা এসেছি। আমাদের মুরব্বিরা আসতে বলেছিল। এসে দেখি কওমি মাদরাসার ছাত্ররা ময়দানের গেট বন্ধ করে রেখেছে। তারা কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না। আমরা জোর করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে আমাদের ওপর হামলা করে। আমার মাথা ও নাক ফেটে গেছে। নবাবগঞ্জ থেকে জামাল উদ্দিন এসেছিলেন জোড় ইজতেমায় অংশ নিতে। কিন্তু গতকাল সকালে সাদ গ্রুপের সমর্থকদের হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন তিনি। জামাল উদ্দিন বলেন, সকাল সাতটায় আমাদের মুরব্বিদের নির্দেশে আসি। কিন্তু এসেই হামলার মুখে পড়ি। আমার ডান হাত বাঁশের আঘাতে ভেঙে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগছি। ঢাকার মিরপুর থেকে আসা মোশাররফ বলেন, আমি মাদরাসায় পড়ি। ইজতেমা মাঠের ভেতরেই অবস্থান করছিলাম। এ সময় আমাদেরকে বাহির থেকে কিছু লোক এসে হামলা করে। কয়েকজনের মাথা ফাটিয়ে দেয়। বাবার সঙ্গে আসা একটি শিশুকেও সাদ গ্রুপের লোকেরা মারধর করে। আমার কান ফাটিয়ে দিয়েছে। খুব রক্ত ঝরেছে। ঢাকার তেজগাঁও থেকে আসা আবু বকর জানান, সকাল থেকে আমরা ভেতরেই ছিলাম। বেলা এগারোটার দিকে সাদ গ্রুপের সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। এখন কথা বলার অবস্থায় নেই। খুব ব্যথা করছে।
টঙ্গীজুড়ে আতঙ্ক: টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুরো এলাকায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ইজতেমা মাঠের আশপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে এই আতঙ্ক। সংঘর্ষ চলাকালে সেখানকার দোকানপাটও বন্ধ থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরও সে আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা যায়। বিকাল তিনটার দিকে কলেজ শেষ করে আসা শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন বলেন, কলেজ থেকে শুনেছি এখানে ঝামেলা হচ্ছে। এখন ভয় হচ্ছে এই রাস্তাটি দিয়ে বাড়ি ফিরতে। রাস্তায় কোনো বাসও পাচ্ছি না। কলেজ থেকে হেঁটেই যাচ্ছি। সুমি সুলতানা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বাসা খুব কাছেই। কিন্তু এ রাস্তা দিয়ে যেতে খুব ভয় হচ্ছে। এত রক্তাক্ত পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। মোহাম্মদ শাহজাহান নামের এক চা দোকানি বলেন, সকাল থেইকা তো দোকান বন্ধ রাখছি। এখন দেখি সব ঠাণ্ডা। যা দেখছি খুব ভয় লাগতেছে। কখন আবার শুরু হয় ঝামেলা। এরা কি ইসলামের দাওয়াত দিবো। ইসলাম মানে তো শান্তি। উল্টা হেরা অশান্তি শুরু করছে। ফরিদ নামের এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, মারামারির সময় দোকান রাইখা বাড়িতে চইলা যাই। আমার ছেলে স্কুলে গেছে। এখন ওরে আনতে যাইতেছি। না জানি আবার হামলা হয়।
তীব্র যানজট: সংঘর্ষের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং টঙ্গীর সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল সকালে ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে আব্দুল্লাহপুর থেকে আসা সবক’টি যানবাহন বন্ধ থাকে। এর ফলে সড়ক ও মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। সংঘর্ষের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টঙ্গী থেকে বিভিন্নস্থানে যাওয়ার উদ্দেশে বের হওয়া হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হন। অনেক অসুস্থ রোগী চিকিৎসা নিতে ডাক্তারের কাছে যেতে চেয়েও পারেননি। অনেক নারী শিশুদের সড়কে হেঁটে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর সড়কটিতে বিভিন্ন যানবাহনে আটকে থাকা যাত্রীদের সবাই হেঁটে গন্তব্যে যান। সাবিহা সুলতানা নামের এক কলেজ শিক্ষিকা বলেন, এদেশে কোনো ইস্যু পেলেই হলো রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করে। এটা কেমন কথা। এ রাস্তা তো কারো একার নয়। সবার সুবিধা অসুবিধা বুঝতে হবে। এ সড়কে অনেক রোগী বসে আছেন। যারা হাসপাতালে যেতে পারছেন না। মানুষ মরবে তারপরও আন্দোলন বিদ্রোহ বন্ধ হবে না। শামীম হোসেন নামের একজন বলেন, এয়ারপোর্টে আমার ভাগ্নে আমেরিকা থেকে আসছে। আমি এখনো যেতে পারিনি। খিলক্ষেত বসে আছি। এরকম হলে তো দেশ অচল হয়ে যাবে। সরকার এতকিছু দেখে এসব দেখে না কেন?
এদিকে ঢাকা মেডিকেলে সরজমিনে দেখা গেছে এ পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৪০ জন। এরমধ্যে রয়েছেন ইমাম হোসেন (৪৫), আব্দুল্লাহ-(২০), শামীম (৪০), শাহীন (৪০), আনিসুল হক (৩৫), মাইনুদ্দিন (৩০), বিল্লাল হোসেন (৫০), ফয়সাল (২২), নুর আলম (২৬), শামীম (১৯), জুবায়ের (২৫), ওমর ফারুক (২৩), ইব্রাহীম (৪২), জসিমউদ্দিন (৫০), হাসান (৪৫), মাসুদুর রহমান (২৫), আলমগীর হোসেন (৪৬), শাকিল (৪০), ইসহাক (২০), মুজাম্মেল (২০), গোলাপ মিয়া (৪১), আজম খান (৫০), নুর হোসেন (১৮), সারোয়ার (১৮), মাসুদুর রহমান (৩০), আনোয়ার (২৬), দুদু মিয়া (২২), আবুজা (২৪), নুর ইসলাম (২৪), সেলিম মিয়া (২৮), বোরহানউদ্দিন (১৭), আব্দুল্লাহ (৪৫), সামছুদ্দিন, সাইফুল্লাহ (২৬), আল আমিন (২০), আল মাহবুব (২২)সহ অজ্ঞাত আরো ৫ জন। আহত বিল্লাল হোসেনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
ইজতেমা মাঠ প্রশাসনের দখলে থাকবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ নিয়ে সংঘর্ষে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ৩০শে ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের ইজতেমা হবে না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত এর আগেও আমরা নিয়েছিলাম। আমরা সেটাকেই আবার রিপিট করেছি। সারা দেশে ইলেকশন পর্যন্ত ইজতেমার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি সভা বা জোড় ইজতেমা কিংবা ইজতেমার জন্য সব ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ থাকবে। ইলেকশনের পর ইজতেমার তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত তাবলীগ জামায়াতের দুই পক্ষকে নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ইজতেমার তারিখ কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না, ইজতেমার তারিখ শুধু শিফট হচ্ছে, ইলেকশনের পর যে কোনো সময়ে এটা হবে। এখন থেকে ইজতেমার মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রশাসন সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। আমরা সেখানে কাউকে অ্যালাউ করবো না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার জন্য সবই নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলা হবে। ফৌজদারি মামলায় যেভাবে তদন্ত হয় সেভাবেই তদন্ত হবে। তদন্তে চিহ্নিত দোষী ব্যক্তিদের আইনানুযায়ী বিচার হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিপন্থি বাংলাদেশে তাবলীগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম এবং তাদের বিরোধী কওমিপন্থি মাওলানা জুবায়েরের পক্ষ থেকে তাবলীগের উপদেষ্টা মাওলানা আশরাফ আলী ও আবদুল কুদ্দুসসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ উপস্থিত ছিলেন।
থমথমে কাকরাইল মসজিদ: টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলীগ জামাতের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কাকরাইলে অবস্থিত তাবলীগ জামাতের মারকাজ কাকরাইল মসজিদ। গতকাল ভোর থেকেই মসজিদের চারপাশে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের মূলগেইটে পুলিশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে মসজিদের ভিতরের মুসল্লিরা প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে বের হচ্ছেন। বাকি সময় গেইট বন্ধ রাখছেন। অন্যদিকে পরিচিত মুসল্লি ছাড়া অন্য কাউকে মসজিদের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল না। উপস্থিত মুসল্লিরা জানান, টঙ্গীতে সংঘর্ষের পরে মসজিদে মুসল্লি কম আসছেন। অর্ধেকেরও বেশি মুসল্লি কমে গেছে কাকরাইল মসজিদে। হাবিব নামের এক মুসল্লি জানান, টঙ্গীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাকরাইল মসজিদে একটু থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। সকাল থেকেই মসজিদের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কোনো মুসল্লি মসজিদের বাইরে যাচ্ছেন না। আবার বাইরে থেকে পরিচিত মুসল্লি ছাড়া কাউকে মসজিদের কম্পাউন্ডে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আরেক মুসল্লি মহিউদ্দিন জানান, কাকরাইল মসজিদে পরিচিত মুসল্লি ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ব্যাপক কড়াকড়ি রয়েছে।
কাকরাইল মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই) মো. আবুল কালাম মানবজমিনকে জানান, সকাল আটটা থেকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে কাকরাইল মসজিদের আশপাশে। মুসল্লিদের স্বার্থে নিরাপত্তায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মূলগেইট বন্ধ রাখা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।