এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাংলাদেশের বলবান অর্থনীতি সত্ত্বেও দেশের ব্যাংকিং সিস্টেম নিয়ে ‘নেতিবাচক’ আভাস দিয়েছে বিশ্বখ্যাত ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স ইনভেস্টর্স সার্ভিস। এ জন্য ব্যাংকগুলোর ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি’ বা প্রদানকৃত ঋণের মানের অবনতিশীল অবস্থাকে দায়ী করেছে সংস্থাটি।

মুডি’স-এর বিশ্লেষক টেংফু লি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক তৈরি গার্মেন্ট শিল্পের কারণে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া ও রেমিট্যান্সের হার ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় ভোগ/ব্যয়ে সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে বেশ খণ্ড-বিখণ্ডিত ব্যাংকিং খাতে ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি’ বা ঋণের মান অবনতিশীল। কর্পোরেট গভর্ন্যান্সে অন্তর্নিহিত দুর্বলতার (বিশেষ করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহে) কারণে খেলাপি ঋণের অনুপাত এ বছরের জুন নাগাদ ১০.৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অশ্রেণিভুক্ত পুনঃতফশিলকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকায় তা ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি’র ওপর আরো ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।’
মুডি’স-এর এই বিশ্লেষণ সংস্থাটির ‘ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক- বাংলাদেশি ব্যাংকস: হাই অ্যাসেট রিস্কস ড্রাইভ নেগেটিভ আউটলুক ডিসপাইট রোবাস্ট ইকোনমি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মুডি’স-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পূর্বাভাস মূলত ৬টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বললে, মুডি’স বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের পরিচালনা পরিবেশকে স্থিতিশীল, বিনিয়োগ ঝুঁকিকে অবনতিশীল, পুঁজি অবনতিশীল, মুনাফা অর্জন ও কার্যক্ষমতা অবনতিশীল, অর্থায়ন ও তারল্য স্থিতিশীল এবং সরকারি সহায়তাকে স্থিতিশীল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অ্যাসেট কোয়ালিটির অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের ব্যয় (ক্রেডিট কস্ট) বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের পরিস্থিতি ব্যাংকগুলোর লাভ করার সক্ষমতা হ্রাস করবে, বিশেষ করে যখন সুদ থেকে প্রাপ্ত আয়ও সীমিত থাকবে।

পুঁজি তৈরির হার দুর্বলতর হওয়ায়, লাভকে পুঁজিতে রূপান্তরের হারও কমবে, যদিও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো আগামী বছর পুঁজি বাড়ানোর বাধ্যবাধকতা পূরণে আয় ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর পুঁজি আগের মতোই অপর্যাপ্ত থাকবে। সরকারের পুঁজি-প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল থাকবে।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে অবশ্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও তারল্য থাকবে। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে আর্থিক পরিস্থিতি চাপের মধ্যে পড়লেও, অর্থ সংক্রান্ত কড়া নিয়মনীতি সহজ করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হওয়ায় এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে অগ্রিম অর্থ জমা রাখার অনুপাত সীমিত হওয়ায় (যা ২০১৯ সালের মার্চ থেকে কার্যকর হবে) অর্থায়নের ঝুঁকি আরো হ্রাস পাবে।
মুডি’স ধারণা করছে, বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকিং সিস্টেমের প্রতি আগের মতোই সহায়ক থাকবে। ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার রেকর্ড রয়েছে সরকারের। এমনকি প্রয়োজনের সময় ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেয়ার সামর্থ্য সরকারের রয়েছে, যেটা দেশটির তুলনামূলক কম সাধারণ ও বৈদেশিক ঋণের ভার দেখে বোঝা যায়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version