এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেয়ার অভিযোগে অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ তিন জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তারা হলেন কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখা প্রধান জিনাত আরা ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা। রাজধানীর পল্টন থানায় অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে এ মামলা করেন। পল্টন থানার উপপরিদর্শক সুজন তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার রাত ৮টার পর মামলাটি হয়েছে। শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে এ মামলা হয়েছে। অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

মেয়ের টিসি নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলছে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওদিকে বাবা-মাকে অপমান করার জেরে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহননে ফুঁসে উঠেছে রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। অরিত্রীর আত্মহননের জন্য দায়ীদের বিচার চেয়ে গতকাল দিনভর বেইলি রোডের ক্যাম্পাস ছিল উত্তপ্ত। ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে সকাল থেকে খ- খ- মিছিল ও রাস্তা বন্ধ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। স্কুল ক্যাম্পাসে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এদিকে স্কুলের অধ্যক্ষ, প্রভাতী শাখার প্রধান এবং গভর্নিং কমিটির পদত্যাগ ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকালে অধ্যক্ষ ও শাখা প্রধানের পদত্যাগ, গভর্নিং কমিটি বাতিল এবং অরিত্রী হত্যার প্রচলিত আইনে সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তিন দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। আজ সকাল ১০টায় স্কুলের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষামন্ত্রীর দেয়া তিনদিনের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না হলে এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে গতকাল বিকালে প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি (জিন্নাত আরা) যোগদান করতে পারবেন না। আর ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুটি কমিটি তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. ইউসুফকে আহ্বায়ক করে করা তিন সদস্যের কমিটিতে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার বেনজির আহমেদ ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বিশ্বাস। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ গঠিত অপর কমিটির সদস্যরা হলেন- ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. আতাউর রহমান (অভিভাবক প্রতিনিধি), তিন্না খুরশীদ জাহান (অভিভাবক প্রতিনিধি, সংরক্ষিত মহিলা) এবং ভিকারুননিসার শিক্ষক ফেরদৌসী বেগম। তিনদিনের মধ্যেই অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে ১ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে হাইকোর্ট। এ ধরনের ঘটনা রোধে একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী ভিকারুননিসা নূন স্কুলে গেটে যাওয়ার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষামন্ত্রীর সামনে বিচার চাই, বিচার চাই স্লোগান দিয়ে তার গাড়ি আটকে দেয়। একপর্যায়ে মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেন। এ ঘটনায় আমরা শোকাহত। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি এবং দোষীদের খোঁজে বের করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, তোমরা নিশ্চিত থাকো এ ঘটনার বিচার পাবে। ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর শিক্ষামন্ত্রী স্কুলের অধ্যক্ষ, উপস্থিত শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী কলেজ প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, অরিত্রীর অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীকে মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন করা অপরাধ। এ কাজ যারা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হবে। তবে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা এবং ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিক হস্তান্তরের পর কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে। সেখানে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে। এ ব্যাপারে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, এ ঘটনায় আমরাও সংক্ষুব্ধ। পুরো ঘটনাটির জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না। তদন্ত কমিটি হয়েছে। এরপর চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এবার কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না এটি নিশ্চিত করে বলতে পারি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন এবং অভিভাবকদের মানসিক নির্যাতন বন্ধে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হবে। এটি নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি কমিটি কাজ করছে।

শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মো. ইউসুফ জানান, ঘটনা একসঙ্গে ঘটেনি। এর শুরু থেকে তদন্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা ঘটনার শুরু থেকে তদন্ত করবো। এর সঙ্গে জড়িত, পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যে পরিবারে হয়েছে তাদের সঙ্গেও কথা বলবো। কোনো ঘটনা একসঙ্গে হয় না। আমরা পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনায় আনার চেষ্টা করবো। মন্ত্রণালয় ও স্কুল থেকে গঠিত কমিটির তদন্ত একসঙ্গে দেয়া হবে। সেটি দেখে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।
পদত্যাগ করার যে দাবি শিক্ষার্থীরা করছে এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দোষী সাব্যস্ত হলে আমি পদত্যাগও করবো, প্রয়োজনে আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াবো।

অভিযোগের পাহাড়: নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহত্যার পর স্কুলটির শিক্ষিকাদের দুর্ব্যবহারের ব্যাপারে অভিভাবকরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা জানান, অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে দুর্ব্যবহার, অপমান করা, টিসি ধরিয়ে দেয়া এ স্কুলে রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েও প্রতিকার তো দূরের কথা উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অপমান করার অভিযোগ করেন একাধিক অভিভাবক। তারা বলেন, শিক্ষকরা আমাদের মানুষই মনে করেন না। আমাদের সন্তানরা প্রায় বিচার দেয়, তারা নানা কটূক্তি করে। কথায় কথায় বহিষ্কার, পরীক্ষা দিতে না দেয়া, টিসি দিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। আর কোচিং করানো বাধ্যতামূলক এটি ভিকারুননিসায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে অভিভাবক অ্যাডভোকেট কামারুজ্জামান কাজল মানবজমিনের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে কোচিং করাতে বাধ্য করা হয়। না হয় ক্লাসে মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষার খাতা ও ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেয়া হয়। এজন্য আমার মেয়ে কোচিংয়ে না গিয়েও শিক্ষকদের টাকা দিতে হচ্ছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে টানা তিন বছর এভাবে কোচিং না করেও টাকা দিচ্ছি। প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার আবেদন করেও প্রতিকার পাইনি। তিনি বলেন, এর সঙ্গে স্কুলের সবাই জড়িত। এ সিন্ডিকেট না ভাঙা পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে।

একজন অভিভাবক অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করে বলেছেন, ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে নোট তুলতে না পারায় ৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে গণিতের এক শিক্ষক বলেন, তোর মা বাবাকে গিয়ে বলবে, কাল থেকে তোর স্কুলে আসা বন্ধ। এ কথা বলে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দেন। পরেরদিন বাবা মাকে নিয়ে এসেও তোপের মুখে পড়েন ওই ছাত্রী। পরে শিফট ইনচার্জের কাছে মুচলেকা দিয়ে ছাড় পায়। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই অভিভাবক কান্নাকাটি জুড়ে দেন। তিনি বলেন, আমার খুব শখ মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে পড়াবো। পড়াশোনা নামে অহেতুক চাপ ও কিছু কিছু শিক্ষিকার দুর্ব্যবহারের কারণে এখন ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা’।

সেখানে উপস্থিত একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, পরীক্ষার প্রশ্ন যে পদ্ধতিতে আসে সে পদ্ধতিতে শ্রেণিকক্ষে পড়ানো হয় না। সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে প্রশ্ন করা হয়। ফেলের নামে জরিমানা বাণিজ্য ও কোচিং করতে বাধ্য করতেই এসব করা হয় বলে অভিযোগ তাদের। এ রকম শত শত অভিযোগ করা যাবে বলেও জানান তারা। অপমান সইতে না পেরে স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহত্যার পর স্কুলটির শিক্ষিকাদের দুর্ব্যবহারের ব্যাপারে অভিভাবকদের অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাংকার শামীম জোরে জোরে বলছিলেন, এ স্কুলে বড় মেয়েকে পড়াতে গিয়ে পড়াশোনা কাকে বলে হাড়েহাড়ে টের পেয়েছি। তাই সুযোগ থাকলেও ছোট মেয়েকে এই স্কুলে ভর্তি করাইনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা জিজ্ঞেস করলে শিক্ষক উত্তর না দিয়ে তাকে থামিয়ে দেবে-এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। আমাদের শিক্ষকরা ঠিকমতোই ক্লাস নেন। কোচিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোচিংয়ে উৎসাহী করার প্রশ্নই ওঠে না। অধ্যক্ষের দাবি, ভিকারুননিসার শতকরা পাঁচভাগ শিক্ষকও কোচিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রী অধিকারী (১৫)। সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতী শাখার নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, অরিত্রীর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার পরীক্ষা দেয়ার সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের স্কুলে যেতে বলে। স্কুলে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানায়, অরিত্রী পরীক্ষার হলে মোবাইলের মাধ্যমে নকল করছিল। তাই তাকে টিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ খবর শোনার পর স্কুল থেকে অরিত্রী বাসায় ফিরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে গতকাল নাজনীন ফেরদৌসের কাছে সাংবাদিকরা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষার হলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে এমন কোনো ব্যবহার করা হয়নি যাতে সে আত্মহত্যা করবে। শাখা প্রধান (প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরা) আমাকে বলেছেন, অন্য শিক্ষার্থীর বেলায় যে নিয়ম তার বেলায়ও একই নিয়ম প্রয়োগ করা হয়েছে।’ নিয়মটা কী? প্রশ্ন করা হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘আসলে নিয়মটা আমার জানা নেই। পরীক্ষায় কেউ নকল করলে তার শাস্তি কী হওয়া উচিত এটা আমার জানা নেই। তবে আমরা অভিভাবককে ডেকে তার সামনে এ বিষয়ে কথা বলি। ওই দিনের পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়।’ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, ‘শাখা প্রধান আমাকে বলেছেন, নকল পাওয়া গেলে কোনো পরীক্ষা নেয়া হয় না। এর বেশি আমার জানা নেই। এটা প্রচলিত নিয়ম।’

একই প্রশ্ন করা হলে প্রায় সমান উত্তর দেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘নিয়মটা আমার জানা নেই। তবে পাবলিক পরীক্ষার বিষয়টা আমার জানা আছে। পরীক্ষায় শাস্তি কী, সে নীতিমালার ব্যাপারটিতে আমি স্পষ্ট নই। তবে কেউ নকল করলে তার ওই দিনের পরীক্ষা নেয়া হবে না। পরের দিন পরীক্ষা দিতে পারবে।’ মেয়েটিকে পরের দিনও পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোলাম আশরাফ বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘সেদিন সময় ছিল না। …এটা শিক্ষকরা জানেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত কমিটি করেছি, অধ্যক্ষ বা অন্য কেউ দোষী হলে সাতদিনের মধ্য তার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা শাখা প্রধানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।’

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version