এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সামনে জাতীয় নির্বাচন। দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। এমন সময়ে পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঠিকানা হাসপাতালে। দেখা সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। স্বজনরাও কাছে যেতে পারছেন না। শারীরিক অবস্থা নিয়ে পার্টির পক্ষ থেকে একেক সময় একেক রকম তথ্য দেয়া হয়েছে। নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জানিয়েছেন, একাকিত্ব আর ভয়ের কারণে এরশাদ হাসপাতালে থাকছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কি কারণে এরশাদের একাকিত্ব অবস্থায় থাকতে হচ্ছে? আর ভয়ই বা কীসের? এ নিয়ে পার্টিতেই চলছে নানা আলোচনা।

গত কয়েকদিনে নেতাকর্মীরা এরশাদকে পার্টির কার্যক্রমে সরাসরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করছেন শারীরিক অবস্থার কারণে হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক এরশাদ এখন দৃশ্যপটের বাইরে। তার অনুপস্থিতিতে আসলে দল পরিচালনা করবে কে? ছোটভাই জিএম কাদেরকে রাজনৈতিক উত্তরসূরি করতে এরশাদ অনেক আগে থেকে চেষ্টা করে আসছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ও তিনি এমন চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা করতে পারেননি। তাকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার পর রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান করতে হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এরশাদ যদি দল পরিচালনা থেকে দূরে থাকেন তাহলে এই দুইজনের কে দল চালাবেন এ নিয়ে প্রশ্ন আছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। পার্টির একটি বড় অংশ চায় এরশাদের অবর্তমানের জিএম কাদেরই যেন পার্টির নেতৃত্ব দেন। অন্য অংশটি অবশ্য রয়েছেন রওশন এরশাদের পক্ষে। সর্বশেষ রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে দলে। পার্টি চেয়ারম্যান ঠিক কী কারণে হাওলাদারকে সরিয়ে দিয়েছেন তা নেতাকর্মীরাই ওয়াকিবহাল নন। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তার বাণিজ্য করার অভিযোগ দলের নেতারাই সামনে আনছেন। কেউ আবার বলছেন এরশাদ হাওলাদারের ওপর দীর্ঘদিন ধরে আস্থা রেখে আসছেন। তিনি যা করছেন তার সবই পার্টি চেয়ারম্যান অবগত। হঠাৎ করে তাকে সরিয়ে দেয়ার অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। পার্টি সূত্র বলছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এখন কার্যত ‘হাসপাতালবন্দি’ অবস্থায় আছেন।

গত কয়েকদিন ধরেই তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না। এমনটি তার পালিত কন্যাও সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। দলের অনেক নেতাও চেষ্টা করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। নেতাকর্মীরা বলছেন, পার্টি চেয়ারম্যান অন্তরালে থাকায় তারা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছে না। দল কাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিচ্ছে সেটি নিয়েও সন্দিহান তারা। এদিকে মহাসচিব বদল হওয়ায় জাতীয় পার্টি প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন ক্ষমতা নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দেয়ার তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার নির্বাচন কমিশনে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। নতুন মহাসচিব ঘোষণার পর একাধিক দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা তৈরির প্রেক্ষাপটে জাপা থেকে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পার্টির মনোনয়নপত্রে রুহুল আমিন হাওলাদারের স্বাক্ষর ছিল। তাকে সরিয়ে দেয়ার পর প্রশ্ন উঠছিলো পার্টির চূড়ান্ত মনোনয়নের সিদ্ধান্ত কে নেবেন?

জাপা মহাসচিব রাঙ্গা বলেন, এটা এমন বড় কিছু বিষয় না। পার্টির মহাসচিব যে কোনো সময় বদল হতে পারে। আর আগের কাগজে তার স্বাক্ষর থাকলেও এখন থেকে নতুন মহাসচিব এগুলো করবেন। এর আগে মনোনয়নপত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন রুহুল আমিন হাওলাদার। আর পার্টির চেয়ারম্যান বর্তমান মহাসচিবকে দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনে গতকাল একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

এদিকে জাপার ‘চূড়ান্ত মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দে’ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নতুন তালিকা পাওয়ার কথা জানিয়েছে ইসি। ইসি সচিব হেলালুদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাপা চেয়ারম্যান এবং নতুন মহাসচিবের মনোনয়ন সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছেন। মনোনয়ন নিয়ে তাদের কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version