এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠের লড়াই শুরু হচ্ছে আজ থেকে। প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট ও বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বিপরীতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। এরপরই প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে প্রচারণা শুরু করবেন। আর এ প্রচারণার মধ্য দিয়েই শুরু হবে নির্বাচনের মাঠের লড়াই।

দেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ক্ষমতাসীন দলের অধীনে হতে যাওয়া নির্বাচনে মূল লড়াইয়ে আছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও নির্বাচন সামনে রেখে গড়ে উঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রায় তিনশ’ আসনেই মূল লড়াইয়ে থাকছেন এ দুই জোটের প্রার্থীরা। এর মধ্যে নৌকা নিয়ে লড়ছেন ২৭২ জন। আর ধানের শীষে লড়ছেন ২৯৮ জন।

গত কয়েক দিনে আলোচনা-পর্যালোচনা করে দল ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এ নিয়ে দুই জোটে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা গেছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেককে আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তেও কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে আছেন। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হবে তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে ২৯ আসনে সমঝোতার কথা বলা হলেও দলটি ১৭৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। জোটের অন্য শরিকরা পেয়েছে ১৬টি আসন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি ২৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। অন্য ৫৮টি আসন শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হওয়ায় এবার প্রচার মাঠে নজর সব দলের। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এই জোট লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করে আসছে। জোটের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রচারে সমান সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া জোটের অনেকে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রেও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পক্ষপাতের অভিযোগ আনা হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন ধরে চলা আলোচনা সমালোচনার একটি চিত্র বোঝা যাবে প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকে। প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন কিনা এ প্রশ্ন রয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের মাঝে।

এদিকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে গতকাল অনেকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। ৩০০ সংসদীয় আসনে চূড়ান্ত লড়াইয়ে থাকছেন বাকি প্রার্থীরা। গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীরা হাজির হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। অনেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, দল ও জোটগুলোকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাতে হবে। যার অনুলিপি দিতে হবে নির্বাচন কমিশনে। এর আগে গত ২৮শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৪৯৮টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬৪টি আসনে ২৮১ জন এবং বিএনপি ২৯৫টি আসনে ৬৯৬জন ও জাতীয় পার্টি ২১০টি আসনে ২৩৩ জন প্রার্থী দিয়েছিল।

গত ২রা ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি বাতিল ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এরমধ্যে ৫৪৩টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। ২৪৩টি আবেদন গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট প্রর্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে ৩০০ জনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫২২ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ১৮৫ জন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version