এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর তৃতীয় দিনেও বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ ও বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচারণায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় বিএনপি প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থকরা। হামলা হয়েছে চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর প্রচারণায়। গাজীপুরে বিএনপির প্রার্থী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর প্রচার মিছিলে হামলা করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিএনপি প্রার্থীর পথসভা প- হয়ে যায় দুর্বৃত্তদের হামলায়। সাতক্ষীরায় বিএনপি সমর্থকদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটে। কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে হামলা হয়েছে বিরোধী প্রার্থীদের প্রচার মিছিলে। চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বিএনপি প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মিছিলে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে দলটির ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ হামলার প্রতিবাদে বের হওয়া মিছিল থেকে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে।

আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে: আফরোজা আব্বাস
হত্যার উদ্দেশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মহিলা দলের সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস। বলেছেন, আমাকে তারা প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ড্রাইভার রশিদ মারাত্মকভাবে আহত হয়। রশিদের পায়ের রানে কোপ লাগে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাজাহানপুরের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। আফরোজা আব্বাস বলেন, হামলার সময় আমার সামনে দিয়ে পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেলের একটি বহর যাচ্ছিল। আমি এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে তাদের আটকে বলি আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। আপনারা সহযোগিতা করুন। তারা বলে দেখছি। কিন্তু কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে তারা চলে যায়। প্রচারণার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছেও সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। বরং তাদের ছত্রচ্ছায়ায় আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।

আফরোজা আব্বাস বলেন, কমলাপুর হাই স্কুলের সামনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবো বলে মঙ্গলবার প্রশাসনকে লিখিত জানিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রচারণা শুরু করলে ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা চালায়। আফরোজা আব্বাস বলেন, পরে সেখান থেকে সরে গিয়ে মাদারটেক চৌরাস্তা এলাকায় আবার প্রচারণা চালাতে গেলে হঠাৎ করে সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও যুব মহিলা লীগের ২৫/৩০ জন নেতাকর্মী আমাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় সবুজবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহরিয়ার, যুব মহিলা লীগের রিনা খানম, যুবলীগ সভাপতি হিল্টন, শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর, সবুজবাগ থানার ৫নং ওয়ার্ড কমিশনার মঞ্জুর মেয়ে তানিয়া, ৪নং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন, যুবলীগ নেতা নাদিম, আওয়ামী লীগ নেতা রাজ্জাকসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আফরোজা আব্বাস বলেন, আমরা প্রচারণা চালানোর সময় তারা আমার সামনে দিয়ে নৌকা নৌকা বলে সেøাগান দিতে থাকে। এক পর্যায় চিত্তরঞ্জন দাসের হুকুমে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী আমার সঙ্গে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। মহিলা দলের কর্মী শামীমা সুলতানা শীলার চুলের মুঠি ধরে পিটাতে থাকে।

এসময় তারা ধারালো অস্ত্র, লাঠি, সোটা নিয়ে আমি এবং আমার সামনে থাকা কর্মীদের ওপর আক্রমণ করে। এসময় একাত্তর টেলিভিশন ও সময় টেলিভিশনের ক্যামেরা ভাঙচুর করে। অন্যদিকে মহিলা দলের কর্মী শিলাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। নখ উপড়ে ফেলেছে। এছাড়া, মহিলা দলের কর্মী জোহরা আক্তার জুই, সেলিনা আক্তার, আসমা আজিজ, নাসিমা আনোয়ার, শাহেরা আলী, পারভীন, ফরিদার জামা-কাপড় ধরে টেনে-হিচড়ে লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে আহত করে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আফরোজা আব্বাস বলেন, আমাদের ওপর হামলা হলেও আমরা সেখান অবস্থান করছিলাম। একপর্যায় আমি গাড়িতে গিয়ে বসলে সেখানে গিয়ে আমার গাড়িতে হামলা করে। ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক ও লাটি দিয়ে আমার ওপর হামলা হয়। এসময় আমি দরজা খুলে বের হয়ে যাওয়ায় বেঁচে যাই। কিন্তু আমাদের গাড়ির চালক রশিদ মারাত্মকভাবে আহত হয়। তিনি বলেন, হামলার একপর্যায় পাশের এক বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই। সেখানে বাইরের গেট ও জানালা ভাঙা শুরু করে। তখন আমরা সেখান থেকে বের হয়ে চলে আসি। এসময় তিনি বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যতোই হামলা করুক। আমরা মাঠ ছাড়বো না। নির্বাচন থেকেও সরে যাব না। একা হলেও প্রচারণা চালিয়ে যাব। একই সঙ্গে এখন থেকে প্রচারণার সময় কোথাও প্রতিরোধ হলে সেখানেই প্রতিহত করা হবে। ওরা কত আসতে পারে দেখব?

কুলিয়ারচরে নির্বাচনী পথসভায় হামলা বিএনপি প্রার্থী শরিফুল আলম আহত
কুলিয়ারচার (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে নির্বাচনী পথসভায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় আহত হয়েছেন কিশোরগঞ্জ ৬ আসনের বিএনপির প্রার্থী শরিফুল আলম। বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের ওসমানপুর ইউনিয়নের চৌমুরি বাজারে এ যৌথ হামলা চালায় স্থানীয় সরকার দল সমর্থক নেতাকর্মী ও পুলিশ। হামলায় শরিফুল আলম সহ প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানান বিএনপির প্রার্থী শরিফুল আলম। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় ওসমানপুর ইউনিয়নের চৌমুরি বাজারে পথসভা চলাকালীন সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পেছন থেকে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় তিনি সহ প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের ৪টি আসনে নৌকার সমর্থকদের ব্যাপক নৈরাজ্য, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের গণগ্রেপ্তার, মারধর ও প্রচার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে বিএনপি প্রার্থীরা। বুধবার জেলা রিটার্নিং অফিসার, সহরিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচনী তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যন ও ঝিনাইদহ যুগ্ম জেলা দায়রা জজের কাছে পৃথক ভাবে এসব আবেদন করা হয়। দুপুরে ধানের শীষের প্রধান এজেন্ট মো. জাহিদুল ইসলাম একটি আবেদনপত্র তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেন। এ ছাড়া ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও ঝিনাইদহ-১ আসনে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানান। ঝিনাইদহ-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বুধবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর টেক্সটাইল কলেজের পাশে এবং গান্না ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে আমার প্রচার মাইক হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। হাট গোপালপুর বাজারে লিফলেট বিতরণের সময় আমার সমর্থক জাহাঙ্গীর কবির মিন্টু, খাজুরা সাইদ জোয়ার্দ্দার, আবু সাইদ, ডাকবাংলার বৈডাঙ্গা থেকে খাদেম, রবিউল ডাক্তার, আনোয়ারসহ ৫০ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এছাড়া হামদহ বাস স্ট্যান্ডে আশরাফের দোকান ভাঙচুর, শুকুর আলীর বাড়ি ভাঙচুর ও তার স্ত্রী এবং ছেলেকে মারধর করে।

অচিন্তানগর গ্রামের ইদ্রিস আলীর দুইটা গরু ও তিনটি ছাগল লুট করেছে নৌকার সমর্থকরা। বালিয়া ডাঙ্গার আরব আলী, হরিশংকরপুরের লোকমান উভয়কে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে নৌকার সমর্থকরা। মান্দারতলার আমিরুলের বাড়ি ও আক্তারের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। সম্রাট নামে একজনকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে। শহরের ওয়াজির আলী স্কুলের সামনে উপজেলা বিএনপির নেতা ডাকবাংলা এলাকার জাহাঙ্গীর, কামাল হোসেন ও শরীফুল ইসলামকে বুধবার বিকালে নৌকার সমর্থকরা ব্যাপক মারধর করে। ঝিনাইদহ পৌরসভার কাউন্সিলর বিএনপি নেতা মহিউদ্দীনকে গ্রেপ্তরা করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ডাকবাংলা ফাঁড়ির এসআই তৌহিদুল ইসলাম সারারাত গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় তা-ব চালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের কর্মী ও সমর্থকদের মারধর এবং নানা রকম ভয় ভীতি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ ব্যাপক সহিংসতা চলানো হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম হিরণ পৃথক দুটি ঘটনার বিষয়ে অস্বীকার করে জানান, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এ ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ জানান, নৌকার প্রার্থী নিজে ও কালীগঞ্জ থানার ওসি বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এলাকা ত্যাগের জন্য হুমকি দিচ্ছে।

ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ অভিযোগ করেন, শেখপাড়া বাজারে তার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে অর্ধশত যানবাহন ভাঙচুর করেছে নৌকার ক্যাডার বাহিনী। হামলা চালানোর পর উল্টো শৈলকুপা থানা পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে পুলিশের পাশাপাশি নৌকার সমর্থকরা অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এসব বিষয়ে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রতিকার দাবি করেন। এ বিষয়ে শৈলকুপার সহ-রিটার্নিং অফিসার ইউএনও উসমান গণি জানান, প্রতিটি ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি পরিবেশ শান্ত রাখার।

স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৭ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষকালে একপক্ষ আরেক পক্ষের লোকজনের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার রূপগঞ্জ সদর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সমর্থিত ছাত্রদল নেতা সোহেল, এমদাদ, মোমেনসহ ১৫/২০ জন নেতাকর্মী বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রূপগঞ্জ সদর এলাকার কাজী আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পোস্টার লাগাতে যায়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থিত ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মশিউর রহমান রিপনসহ তার লোকজন তাদের বাধা দিতে আসে। এনিয়ে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। সংঘর্ষে সোহেল, সাগর, এমদাদ, মোমেন, খলিল, আসলাম, মানিক, আলামিন, তোফাজ্জল হোসেন, রফিকুর ইসলাম, পিস্টন রাসেলসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৭ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষ চলাকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদল নেতা সোহেল, মোমেন, খলিল ও মানিকের বাড়িতে ও বিএনপির সমর্থিত লোকজন ছাত্রলীগ নেতা পিস্টন রাসেলের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে বলে উভয়পক্ষের লোকজন দাবি করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, আমি এই হামলা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে লুটপাটের তীব্র প্রতিবাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের শাস্তি দাবি করছি। নির্বাচন কমিশন মুখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বললেও বাস্তবে ঘটছে উল্টো ব্যাপার। আমাকে কোথাও প্রচারণা চালাতেই দিচ্ছে না। পাশাপাশি গ্রেপ্তার নির্যাতন চালানো হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর।
ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মশিউর রহমান রিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিএনপির লোকজন পোস্টার লাগানোর সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের দেখে তারা উস্কানিমূলক কথা বলে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে বিএনপির লোকজন উল্টো আমার লোকজনের ওপর হামলা করে।

রূপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদারের নির্বাচনী পথসভায় দুবৃর্ত্তরা হামলা চালিয়ে পথসভা প- করে দিয়েছে।
এ সময় ৭-৮ জন নেতাকর্মী আহত হন। তাদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ছাড়া তাদের বহনকারী দুটি মাইক্রো গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

তাড়াশ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন।
বুধবার বিকাল চারটার দিকে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান তালুকদার উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক স ম আফসার আলীসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলার বারুহাঁস ইউনিয়নের বিনোদপুর খেলার মাঠে পথসভায় যোগদানের উদ্দেশে তাড়াশ সদর থেকে রওনা হন। পরে বিনোদপুর বাজার এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা পৌঁছলে কিছু দুর্বৃত্ত লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত ওই পথসভার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে পথসভা প- করে দেয়। এ সময় প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদারের ব্যবহৃত দুটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলার প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদার জানান, সরকারি দলের লোকজন এ হামলা চালায়। তাড়াশ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বারুহাঁস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন মুক্তা বলেন, বিএনপির লোকজনই ইস্যু তৈরি করতে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় বিএনপি সমর্থকদের কয়েকটি বাড়িতে হামলা, দোকান ভাঙচুর ও ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে সদরের বৈকারি এলাকায় এ হামলা ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার জানান, মঙ্গলবার রাতে ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকরা বৈকারি ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে পোস্টার টাঙাতে গেলে একদল যুবক স্থানীয় কাথন্ডা বাজার ও নাপিতঘাটা এলাকায় ধানের শীষের পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তারা নুরুল মুন্সি, সাবেক ইউপি সদস্য জালাল ও খালেক হাজরার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট ও নাপিতঘাটায় একটি সারের দোকান ভাঙচুর করে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা ইনজামামুল ইসলাম ইঞ্জার নেতৃত্বে এ হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা ইনজামামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানি না।

সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে গত ৩ দিনে নৌকা সমর্থকদের হামলায় ধানের শীষের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ বুধবার আদালতে হাজিরা দিতে এসে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম চৌধুরী ও তার স্ত্রী। গুরুতর আহত মাহবুবকে নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে নগরীর মনোহরপুরস্থ নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আমিন উর রশিদ ইয়াছিন জানান, তার অনুসারী নগরীর সদর দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম চৌধুরী বুধবার সকালে তার স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা নাসরিন আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার পথে আদালত ভবনের সামনে ১৫/২০ জনের একটি দল তাদের উপর হামলা চালায় এবং মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়। আদালত পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নগরীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাজী ইয়াছিন আহত নেতাকর্মীদের ছবি দেখিয়ে বলেন, গত তিনদিনে আসন্ন এলাকার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। এ সময় বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি প্রশাসনের নিকট নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির দাবি জানান। এ সময় বিএনপির জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version