এশিয়ান বাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশে নির্বাচনী পরিস্থিতিতে ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক। একজন সাংবাদিক বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেন। ওই সাংবাদিক জানতে চান: বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ। এখন তো সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন কল্পনারও অতীত। এমন কি একজন নির্বাচন কমিশনার সতর্ক করে বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এ পরিস্থিতি সম্পর্কে কী অবহিত মহাসচিব (অ্যান্তনিও গুতেরাঁ)? আগামী ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে। তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে তিনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে স্টিফেন ডুজাররিক বলেন, আমরা ঘনিষ্ঠ নজর রাখছি পরিস্থিতিতে।

নৈতিকতার বিষয়ে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, যখন যেখানেই নির্বাচন হোক, তা হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। মানুষকে তার মত প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি ও বিরোধীদলীয় অন্য দলগুলো অভিযোগ করছে নির্বাচনের পরিবেশ অনুপস্থিত। তবে, আওয়ামী লীগ বলছে অন্য কথা। তারা বলছে, নির্বাচনে খুব সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে, মাঠপর্যায়ে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৩ জন প্রার্থী ও তাদের ৯শ’ সমর্থক আহত হয়েছেন। অভিযোগ আছে, ১০ই ডিসেম্বর থেকে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের কমপক্ষে ২৮ জন প্রার্থীর প্রচারণা ও গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজনকে। তবে মিডিয়ার খবর অনুযায়ী, পুলিশ আটক করেছে প্রায় ২৫৫ জন বিএনপি নেতাকে। সহিংসতার পরে কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে মোতায়েন করেছে বিজিবির একহাজার ১৬ প্লাটুন সদস্যকে।

ওদিকে গত ১৭ই ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনে এখনো বাংলাদেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অনুপস্থিত। তিনি বলেছেন, আমি মনে করি কোনো লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই। ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ অর্থহীন হয়ে পড়েছে। তার এ মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়েছে।

সহিংসতায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ : বাংলাদেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা এবং ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থানে জাতিসংঘ (ইউএন) মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, নির্বাচনের কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুরা নতুন করে হামলার শিকার হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত হিন্দুদের ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। ২০১৮ সালের প্রথম ছয় মাসে ৩৮০ জন হিন্দু হামলার শিকার হয়েছে। খবর ওএইচসিএইচআরের ওয়েবসাইটের।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিরোধী দলের প্রার্থীদের গ্রেফতার করছে ও ভয় দেখাচ্ছে। ভিন্নমতের ব্যক্তিদের কণ্ঠরোধ করছে। বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার, হত্যা ও গুমের ঘটনাও ঘটছে। এসব হামলা, হত্যা ও গুমের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে তারা জানতে পেরেছেন। আসন্ন নির্বাচনে সব দলের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই বলে একজন নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্যও তারা তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের সরকারের আশু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলেও তারা মন্তব্য করেন। ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলার পর বিশেষজ্ঞরা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। ৯ থেকে ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিভিন্ন ঘটনায় আটজন নিহত এবং ৫৬০ জন আহত হয়েছে।

নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালে এবং নির্বাচনের পর মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অনুমতি দেয়া এবং তাদের উৎসাহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ইউএন বিশেষজ্ঞরা অনুরোধ জানান।

ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া বাঁচার অধিকার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মবিশ্বাসের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ধর্মীয় মৌলবাদীদের সঙ্গে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের আপসের খবরে তারা অস্বস্তি প্রকাশ করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেন, এর মাধ্যমে সাংবাদিকরা এবং যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্ত মতামত প্রকাশ করবে তারাও নির্যাতনের শিকার হবেন। শঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিরা সহিংসতার শিকার হতে পারেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু, তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা হতে পারে। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়েও তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ কারিমা বেননাউন বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় ক্রমবর্ধমান বাধা, নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতা ও ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থান বাংলাদেশের জন্য ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সরকারকে এ ব্যাপারে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version