এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সুস্পষ্টভাবেই বাংলাদেশের নির্বাচন ‘যথাযথ’ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। শুক্রবার নিউ ইয়র্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক জীবনে ইতিবাচক সমাধানের জন্য আমরা অংশীদারদের অর্থপূর্ণ সংলাপে বসতে উৎসাহিত করছি। বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজলের এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিব এ কথা বলেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন। বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলেও আখ্যা দেন তিনি।

মিস্টার ফজল তার প্রশ্নে নির্বাচনে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন ও ভীতি প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আপনি জানেন গত ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন চালানো হয়েছে। আর বিরোধীরা নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বাংলাদেশে স্বাগত জানানো হয়নি। পরে তারা আর বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ১৭টি সংগঠনকেও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি? আপনি কি সার্বিক বিষয় তদন্ত করতে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কোনো দূত বা বিশেষ কোনো টিমকে পাঠাচ্ছেন?

জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ম্যান্ডেট ছাড়া এ রকম তদন্ত করার অধিকার আমাদের নেই। তবে সবার আগে আমি বলতে চাই, রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্পর্কিত ইস্যুতে জাতিসংঘের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো বাংলাদেশ। দেশটি ভয়াবহ জটিল অবস্থার মধ্যে এত বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার যে উদারতা দেখিয়েছে তার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আমরা ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ। এ সমস্যা রয়ে গেছে। এখন, অবশ্যই নির্বাচন ‘যথাযথ’ ছিল না। তাই আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন পক্ষকে অর্থপূর্ণ একটি সংলাপের জন্য উৎসাহিত করি। যাতে যতটা সম্ভব বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে ইতিবাচক শৃঙ্খলা আনা যায়।

ওদিকে ওই একই প্রেস ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে প্রশ্ন রাখেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিক মাইকেল নিকোলাস। তিনি অ্যান্তোনিও গুতেরাঁর কাছে জানতে চান, মিয়ানমার ইস্যুর প্রশ্নটি। এ সংকট শুরুর পর ১৮ মাস পার হয়েছে। অনুল্লেখ্য সংখ্যক শরণার্থীই ফিরে গেছেন। জাতিসংঘ সেখানে যে সুবিধা চেয়েছিল তা পাচ্ছে না। পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সে বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদও কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায়। সর্বশেষ কখন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে আপনি কথা বলেছেন? তাকে আপনি কি বার্তা দিয়েছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিব। বলেন, খুব ভালো। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে, যখন আমরা সর্বশেষ কথা বলেছি। আমার বার্তা সব সময়ই একই রকম। এতে অবশ্যই আস্থা ও বিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এটা শুধু ‘ফিজিক্যাল’ পুনর্গঠনের বিষয় নয়। এটা হলো সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি পুনর্জাগরণের বিষয়। সরকারের শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির বিষয়, যেটা হলো সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে যতটা সম্ভব পুনরেকত্রীকরণ ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, পরিস্থিতি যেমন হওয়ার কথা ছিল এখনো তেমন নয়। সবকিছু চলছে খুবই ধীরগতিতে। যদি এই সমস্যার মূল কারণ সমাধান করতে ব্যর্থ হন তাহলে সহিংসতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এবং এমনটা আমরা মিয়ানমারে সম্প্রতি দেখেছি।

তাই আমি মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের অগ্রগতিতে ঘাটতির বিষয়ে এবং এসব মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে ভীষণ রকম হতাশাগ্রস্ত। বিশেষ করে, চরম, অত্যন্ত চরম অবস্থার মধ্যে এখন বাংলাদেশে বসবাস করছেন এ সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ। আমি তাদেরকে ভুলে যেতে পারি না। আমরা চাই, এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে যাতে তারা স্বেচ্ছায় ফিরে যান। এক্ষেত্রে প্রথম যে পদক্ষেপটা হওয়া উচিত অবশ্যই তা হলো অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের সমস্যা সমাধান। এসব মানুষের সমস্যার বিশ্বাসযোগ্য সমাধান দেয়ার ফলেই ভবিষ্যৎ প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version