ওয়াহিদুজ্জামান 

একটি শান্তি পূর্ন দেশের অবস্থা কার কাছ থেকে আশা করবেন ? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা এমনকি শিক্ষকদের কাছ থেকে ? প্রায় সর্ব স্তরে যৌন হয়রানি। দেশব্যাপীতো এখন চলছে ধর্ষণের মহা উৎসব! বনানীর ধর্ষক আটক হয়েছে, কিন্তু পল্লবীর ধর্ষকরা ? শ্যামপুরের গণ ধর্ষণ, শ্রীপুরের হযরত আলীর শিশু কন্যা! যে ধর্ষণের প্রতিকার না পেয়ে বাবা মেয়ে ঝাপ দিলো ট্রেনের নীচে । আজও ঢাকায় আরেকটি ধর্ষণের খবর পেলাম। রাষ্ট্র ধর্ষিত হচ্ছে, অফিস ধর্ষিত হচ্ছে, কলিগ ধর্ষিত হচ্ছে, বাজার ধর্ষিত হচ্ছে, ধর্ষিত হচ্ছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ভাই, বোন, বউ, পাহাড়, নদী, জঙ্গল, বাতাস সব। যেনো বাঙ্গালি আজ ধর্ষকের জাতি মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ নামের আড়ালে এ ভূখণ্ডের নাম রেপ কান্ট্রি হয়ে যায় কিনা !

আপানার ঘামে ঝরা পাঠানো টাকা দিয়ে জাতি এবং দেশ গড়ার কারিগর খ্যাত একজন শিক্ষক। তারপরও একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের জীবন শুনেন, ভদ্রলোক প্রতিদিন নাশতা খেয়েছেন ৭ হাজার ২শ’৩৩ টাকার। তিনি একজন ভিসি। উপাচার্য । এখন সাবেক। ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬ এই দুই অর্থবছরে মাত্র ১৬৫ দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করে মোট ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৫শ’ ২৮ টাকার ‘নাশতা’ খেয়েছেন। যার অর্থ প্রতিদিন ৭ হাজার ২৩৩ টাকা। নাশতা তিনি খেতেই পারেন। তিনি যখন মিটিংয়ে থাকেন, তখন নাশতা খেতে পারেন। তবু তার জন্য প্রতিদিন ৭ হাজার ২শ’৩৩ টাকা বরাদ্দ ! কী খেয়েছিলেন তিনি?

সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, মন্ত্রীরা কিংবা সচিবরাও কী তাহলে এ ধরনের নাশতা করেন?

হে প্রবাসীরা, কয়েকদিন আগে আপানাদের প্রিয় দেশের একটি ঘটনা বলছিঃ-

গোসিঙ্গা ইউনিয়নের কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামের নিঃসন্তান হজরত আলী ও হালিমা বেগম দম্পতি ৮ বছর আগে তিন মাসের শিশু আয়েশাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। পেটের সন্তানের মতোই আদর-যত্ন আর স্নেহ ভালোবাসায় বড় হচ্ছিল আয়েশা। পড়ছিল হেরাপটকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে।

প্রায় দুই মাস আগে একদিন হঠাৎ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে তুলে নিয়ে যায় এলাকার ফারুক হোসেন ও দুলাল মিয়াসহ তিন যুবক। সন্ধ্যায় রক্তাক্ত অবস্থায় বাচ্চা মেয়েটাকে ফেরত দেয় পাষন্ডগুলো। এই নির্যাতনের বিচার চেয়ে হজরত আলী থানায় অভিযোগ করেন। স্থানীয় ফারুক, আফসু, কুদ্দুস ও আবদুল খালেকের নামে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এএসআই বাবুলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আলী স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের কাছেও এর বিচার দেন।

তারপরেই ঘটে ঘৃণিত ঘটনাটি । বাংলাদেশের আর দশটা নারী নির্যাতনের ঘটনার মতো আয়েশা নামের এই বাচ্চাটার উপরে চালানো পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাটাও ধামাচাপা দেবার জন্য নির্লজ্জ প্রস্তাব দেয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন। হ্যাঁ, মাত্র এক হাজার টাকার বিনিময়ে এই পাশবিকতার ঘটনা ভুলে যাবার জন্য হুমকি দেয় সে। ঘৃণাভরে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর হজরত আলী ও হালিমার পরিবারের উপর নেমে আসে নানা নির্যাতন। গত ৪ এপ্রিল তাদের গরু চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বিচার না পেয়ে আলী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। উল্টো অভিযুক্তরা তাকে নানা হুমকি দিতে থাকে।

হালিমা জানান, সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে তাদের একটি ছাগল বাড়ির পাশের ক্ষেতে যাওয়ার অপরাধে আলীকে মারার জন্য দা ও লাঠি নিয়ে মহড়া দেয় ওই এলাকার বোরহান ও শাহিদ। আয়েশাকে অপহরণ করারও হুমকি দেওয়া হয়। তাদের হাত থেকে রক্ষার জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে লুকিয়ে থাকেন রাজমিস্ত্রি আলী।

প্রিয় পাঠক, স্রেফ একবারের জন্য হজরত আলীর জায়গায় আপনাকে আর ফুটফুটে আয়েশার জায়গায় আপনার আদরের রাজকন্যাটাকে ভেবে দেখুন তো! আপনি লুকিয়ে আছেন আপনার রাজকন্যাটাকে নিয়ে, কারণ বেশ কিছু নরপিশাচ আপনার মেয়েটাকে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই অপরাধের কোন প্রতিকার নাই, বিচার চাওয়ার মতো কোন আইনের দরজা নেই। যে আইনের হাত বিচার করবে, সেই হাত অপরাধীর হাতের সাথে মিলে গেছে। কেউ নেই আপনার পাশে, বরং বিচার চাইতে গেলে মেয়েটাকে হারাবেন, মরতে পারেন নিজেও। কিছু ভাবতে পারছেন কি? মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে না?

হ্যাঁ, হজরত আলীরও মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। হজরত আলী বুঝে গিয়েছিলেন এই ঘৃণ্য নোংরা জঘন্য দেশের সর্বত্র এমন হাজারো নরপশু ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর বাকিরা চোখে ঠুলি পরে, কানে তুলো গুঁজে আর মুখে জিপার আটকে জম্বির মতো বেঁচে আছে। এই দেশ মানুষের না। তাই সেদিনঅ শনিবার সকালে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন আলী। ব্যস, সব সমস্যার সমাধান!

শনিবার দেখা যায়, রেললাইনের পাশে সবুজ ঘাসের ওপর পড়ে আছে দুটি মরদেহ। এক হতভাগ্য বাবা এবং তার হতভাগ্য সন্তানের মৃতদেহ। একটু দূরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গগনবিদারী আর্তনাদ করছিলেন আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম। বলছিলেন- ‘আমি কিছু চাই না, তোমরা আমার মাইয়ারে আইন্যা দেও, আমার স্বামীরে আইন্যা দেও।’

দাঁড়ান, দাঁড়ান ! হজরত আলী আর তার মেয়ে আয়েশার আত্মহত্যাকে “স্বরাষ্ট্রস্টাইলে” বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার আগে কয়েকটা পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে আসি, চলেনঃ- ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৩২৫টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই ৩২৫ শিশুর মধ্যে ৪৮ জন শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, ৩১ জন প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশু, ৫ জন গৃহকর্মী শিশু। এদের মধ্যে ১৫ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

এগুলো কেবল সেই সকল ঘটনা, যেগুলোর ক্ষেত্রে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাহলে এবার ভাবুন, সারা দেশে ক’জন অভিভাবক ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার দুঃসাহস করেছেন ? আর কতজন ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সাহস করেননি ? কিংবা ভাবুন তো, মোট কতটি ঘটনায় অভিভাবক লোকলজ্জার ভয়ে ধামাচাপা দিয়ে ফেলেছেন ? কার ইজ্জতের দাম বেশি ধনীর না গরিবের ?

এ ঘটনা শেষ হতে না হতেই বনানীতে ঘটে গেল আরেক ধর্ষণের ন্যক্কারজনক ঘটনা। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে সাফাত ও নাঈমরা দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন এবং অন্যরা ছিলেন সহযোগী।এ যেন সত্যি কোন অসভ্য নরকের কাহিনী। সুস্থ সমাজে এধরণের ঘটনা কখনোই ঘটতে পারে না। রাষ্ট্রও কেন যেন নীরব। চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসী আর অসৎ মানুষে ভরে গেছে দেশটা। স্বাধীনতার স্বপ্ন এমনটা ছিলো না। তাহলে কেন এমন হলো আমাদের সোনার বাংলাদেশ। নৈতিকতা-জবাবদিহিতা নেই কোথাও। টাকা ছাড়া কেউ কথা বলে না। পুরো দেশটায় আজ নষ্টদের অধিকারে। বিচার চাওয়াটাও যেন অপরাধ। বাসায় শান্তি নেই। রাস্তায় শান্তি নেই। আইন-শৃঙ্খলাতো নেই ই। নিজের জীবনটা নিয়ে ঠিকমত ঘরে ফেরার নিশ্চয়তাও নেই। এমন অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও দায়িত্বশীল মন্ত্রী যদি বলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে হবে। তখন লুটপাটের পরিমাণটা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘটছেও তাই। সবাই যার যার মতো করে আখের গোছাচ্ছে।

ধর্ম পালনেও শান্তি নেই। ধর্মের নামে ধর্মন্ধ কিছু বিভ্রান্ত মানুষ জঙ্গি-জঙ্গি খেলায় মেতে উঠেছে। নৈতিকতার এতটাই অধ:পতন যে – এখন মসজিদ, মন্দির, উপাসনালয় থেকেও জুতা চুরি হয়ে যাচ্ছে। সর্বত্রই অনিয়ম-অন্যায়-অভিচার। সাধারণ মানুষের মুক্তি মিলবে কি ? দূর দেশে থেকে প্রতিনিয়ত নিজ দেশের স্বপ্ন দেখি। যেখানে থাকবে না চুরি-বাটপারি-ধর্ষণ-হত্যা। ২৪ ঘন্টা দরজা খুলে ঘুমালেও কেউ বিরক্ত করবে না। মানুষ মানুষকে সম্মান করবে। রাষ্ট্র চলবে তার নিজের গতিতে।

যে দেশে ধর্ষণের বিচার নেই।সরকারের জবাবদিহিতা নেই। জনগণের ভোটাধিকার নেই। সাধারণ মানুষের ঘাম ঝরানো অর্জিত হাজার-হাজার কোটি টাকা ক্ষমতাশালী চক্রের বিদেশে পাচার। বন্দুকধারী সন্ত্রাসীরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক। ধর্ষকরাই যে দেশের হর্তকর্তা। সে দেশে বিচার না পেয়ে আত্মহত্যাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা। রাস্তায় বের হলে নিজের মানিব্যাগটা নিয়ে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা নেই। শুধু তাই নয়; নিজের ঘরে শান্তি মত ঘুমানোর কোন অবকাশ নেই। চারদিকে অবৈধ দাপটশালী-সন্ত্রীদের জয়জয়কার। অন্যদিকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের অনিশ্চয়তা-হাহাকার বেড়েই চলছে। উন্নয়নের জোয়ারের নামে সর্বত্রই চলছে ক্ষমতাসীনদের হরিলুট। ঠেকাবে কে? সর্ষের মধ্যেই যে ভুত! দেশে প্রতিটি মানুষ আজ কোন না কোনভাবে ধর্ষিত! কেউ শারিরীক, কেউ মানসিক, কেউ অর্থিক। নিয়ন্ত্রণহীন পুরো সমাজ-রাষ্ট্র। যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খেয়ে সমস্ত অর্থ দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের অজানা ভয়। না জানি কখন ক্ষমতা চলে যাবে। এক ফ্লাইটেই পাড়ি জমাবে বিদেশে। বাহ! কি সুন্দর আমার সোনার বাংলাদেশ! সত্যি কি অভাগা দেশের বাসিন্দা আমরা !!

গত ৬ মে আনন্দ বাজার পত্রিকা লিখেছে। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশই ছিদ্রপথে বিদেশ চলে যাচ্ছে। ঠেকাবে কে? সর্ষের মধ্যেই যে ভুত! পত্রিকাটি আরো লিখেছে এ কারণে ক্রমেই শীর্ণ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এভাবে চলতে থাকলে মনে হয় গুটি কয়েক প্রভাবশালী ছাড়া সবাইকে পথে বসতে হবে। আমার মনে হয়, হওয়ার বাকিও নেই। শহর-গ্রাম-গঞ্জে এখন সাধারণ মানুষের শুধু হাহাকার। আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখার শুরুটা দেখে দারুণ কষ্ট পেয়েছি। তাতে লেখা হয়েছে-“দরজা জানালা খোলা রেখে এসি চালালে কী লাভ। ঘর ঠান্ডা তো হবেই না। মাঝখান থেকে হু হু করে কারেন্ট পুড়বে। গরম থেকে রেহাই দূর অস্ত। এমন খামখেয়ালি কাজ মানা যায় না। বাংলাদেশের বাণিজ্যে এমনটাই হচ্ছে। রফতানিতে যত আয় তার চেয়ে ব্যয় বেশি। আয়ের ৮০ শতাংশ ছিদ্রপথে বিদেশে চলে যাচ্ছে। ঠেকাবে কে ? অভিযোগের আঙুল কাস্টমস আর ব্যাংক কর্তাদের দিকে। রফতানি সংস্থার মালিকদের সঙ্গে যোগসাজসে তাঁরা অর্থ নির্গমনের পথ চওড়া করছেন। টাকার বৈভবে আহ্লাদে আটখানা। প্রাপ্য রসদ থেকে বঞ্চিত হয়ে শীর্ণ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।” প্রথম আলোর খবরে দেখলাম ২০১৪ সালে এক বছরে ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার। ২০০৫-১৪ অর্থবছরে পাচার হয়েছে ৬,০৬,৮৬৮ কোটি টাকা। এটাতো দেখা। অদেখা আরো কত হাজার কোটি কে জানে! এরমাঝে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার ; সারা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। ভবন ধ্বসে এতো মৃত্যুও তাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারেনি! এসব নিউজ দেখলে মনে হয় পুরো প্রিয় জন্মভূমিটাই আজ হরিলুটের মাল!

দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার হওয়ার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, গত দশ বছরে দেশ থেকে ৪০ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরেই পাচার হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

অপরদিকে, প্রত্যেক প্রবাসী এক একটা জ্বলন্ত মোমবাতি। যে নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যদের আলো দেয় ।

একটু পড়ুন আর মিলিয়ে নিনঃ – ১৪ বছর প্রবাসে থেকেও কেন আমাদের চাহিদা আর ঋণ শেষ হয় না ? যারা এখন ঋণ আর চাহিদার ভারে ক্লান্ত মিলে নিতে পারেন এই ভাইটির মত .

দালালকে যা দিয়ে আসা তা সুদে আসলে পরিশোধ করতে তিন বছর।তার পর সাধ হল দেশে যাওয়ার বাড়ির লোক বলল সবেমাত্র ঋণ শেষ হল এখনি আসার কি দরকার।চলে গেল আরও দু বছর এরই মাঝে ছোট বোনের বিয়ের সময় উপস্থিত। ছোট ভাইও মাশাআল্লাহ মেট্রিক পাশ করে কলেজের ছাত্র।

বাবা বললেন মেয়েটির বিয়ে দেয়া জরুরী। টাকা লাগবে। বাড়ি যাওয়ার মনবাসনা মাটিচাপা রেখেই বলতে হল- ঠিক আছে বাবা, আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করেন। বাড়ী যাবে বলে যা অল্প অল্প করে জমিয়ে ছিলো তার সাথে ধার দেনা করে পাঠালো ২ লাখ।

বাবা বললেন উচ্চ বংশীয় জামাই পেয়েছি তার সম্মান রক্ষার্থে ফ্রিজ,ফার্নিচার,সোফা মোটরবাইক সোনা,বর যাত্রী আপ্যায়ন মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ৫ লাখ।বাকি টাকা কোথায় পাব বাবা?

অগত্যা বাধ্য হয়েই বলে দিলো কারো কাছ থেকে আনুন, আমি আস্তে আস্তে শোধ করে দিব। তার মানে এখানে সেখানে মিলিয়ে দেনা ৪ লাখ। ৫ বছর বিদেশ থাকার পর।

দেনার বুঝার সাথে পরিবারের খরচ চালাতে যখন জীবন হিরোশিমার মত বিপর্যস্ত ; তখন বাড়িতে থাকা ভাইটাও ইতোমধ্যে নিজেকে হিরো হিসেবে উপস্হাপন করতে একটা মোটর বাইকের বায়না করে বসল। অবশ্য তার যুক্তিও বেশ……কলেজে যাওয়া আসার সমস্যা। তাকে কোন মতে পরের কথা বলে শান্ত করা গেল আপাতত।

ঋণ যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে তখন হিরো ভাইটা নাছোর বান্দা। বাইক তার চাই ই চাই।সাথে বাবা মায়ের উকালতি,,,,,,উপায় না পেয়ে বন্ধু বান্ধবের সহয়তায় পাঠিয়ে দিলো ১লাখ । তাতেও নাকি হবেনা ! কারন ১লাখে পালসার বাইক মিলেনা।

বাবাকে বলে দিলো কারো কাছ থেকে ৫০ হাজার নিতে,,,,, ব্যস এখানে সেখানে মিলিয়ে আবারও দেনার দায় ২ লাখ। তখন তার সাত বছর প্রবাস হয়ে গেছে। এই ২ লাখ করলে আরও একটা বছর প্রবাসের খাতায় যোগ করে। এবার চোখে দেশে যাওয়ার স্বপ্ন। ভাবছে একটা বছর কিছু জমিয়ে বাড়ি যাবে।ঠিক তাই হল কিছু টাকা হাতে জমা হল বটে, তবে তা যথেষ্ট নয়। ভাবছে আর ছয়টা মাস যাক আরো কিছু জমা করি,,,,,,,,, ছয় মাস পর,,,,,,,,,,

বাড়িতে জানালে দেশে আসতেছি ।

মা খুব খুশি হলেন, বাবা,,,,,,,,,,,কেমন যেন,,, কিছু বলতে চায়।

পরের দিন ফোন করলে মা বলছেন বাবা একটা কথা বলতাম তুর বাবা বলছিলো, দেশে আসলে তুকে বিয়ে করাবে।

ওসব নিয়ে ভাবছিনা মা

আগে দেশে আসি

কিন্তু তর বাবা বলছিল, আমাদের ঘর দুটিই একেবারে পুরোনো হয়ে গেছে ।একটা ঘর না উঠালে মানুষ কি বলবে !

ভাল সম্বন্ধ ও আসবেনা।

মানুষ এখন পরিবেশটা আগে দেখে।

মায়ের কথা শুনে আশার বেলুনটা চুপসে গেলেও ভাবছি; কথাটি মন্দ নয়। দশ বছর বিদেশ কাটিয়ে একটা ঘর উঠাতে পারিনি একথা শুনলে কোনো বাবায় হয়ত মেয়ে দিতে চাইবেনা।ব্যস,,,,,ঘরের ইট বালু আর সিমেন্ট এর টাকা দিতে দিতে প্রবাস জীবন ১৪ বছরের হাহাকার ! তার পর ছোট ভাইয়ের চাকরি,,,,,,,,,,,,,,,,,,হায়রে বিদেশ।

প্রবাসীরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং সর্বোচ্চ দৃঢ়চিত্তের হয়।

প্রতিটি সেকেন্ড ত্যাগের মাধ্যমে পরিবারকে আনন্দ দেওয়াই তাদের সুখ।।

এতকিছুর পরও ।।

বিদেশ থেকে টাকা পাঠাবেন ? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে মিলিয়ন ডলার লুট করে নিয়ে যাবে সরকারের লোকেরা!

ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোটিজ করবেন? আপনাকে কাগজ দিয়ে টাকা নিয়ে বস্তা ভরে বাড়িতে নিয়ে যাবে ব্যাংকের লোকজন!

ব্যাংকে আমানত রাখবেন? আপনার টাকায় ব্যাংক লোন দিবে সরকারের প্রভাবশালী ও খাতিরের হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপের মত লোকদের। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিবে। বর্তমানে ৯৩ হাজার কোটি টাকা তামাদি ঋণের মধ্যে ৬৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নাই!

এভাবে সরকারী ব্যাংকগুলোতে পাল্লা দিয়ে পাবলিকের টাকা লুটপাট হচ্ছে, তাতে জনগনের আমানত ঝুকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। এরপরে কি আর ব্যাংকের কাছে আমানত রাখা যায়? আর সেদিনের বাজেটতো শুনলেনই !

প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সাত বছরে ৬টি বড় প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ বা চুরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সালে শেয়ার বাজার থেকেই চুরি করা হয় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ২০১২ সালে হলমার্ক ও বেসিক ব্যাংক থেকে ৪ হাজার পাচশঁত কোটি টাকা করে মোট নয় হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়। ডেসটিনি থেকে ৪ হাজার একশত উনিশ কোটি এবং বিসমিল্লাহ গ্রুপ থেকে ১১শ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। সর্বশেষ গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লোপাট হয় ৮শ কোটি টাকা।

শেয়ার বাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা খোয়া গেলেও কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। অথচ সবাই জানে শেয়ার বাজার থেকে হাজারো কোটি টাকা লুন্ঠনের নেপথ্যের নায়ক কারা। বেসিক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার চুরির ঘটনায়ও কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। বাকি প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাটের ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কারো সাজা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা হলেও এখনো অভিযুক্ত/অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায়নি।

দেশের খেটে খাওয়া মানুষের পকেট কেটে চুরি করা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোন কোষাগারে জমা আছে কেউ কি বলতে পারবেন?

বাংলাদেশ ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা লাপাত্তা!!! আমার অরণ্যে রোদন……

কাক ডাকা ভোরে, শীর্ণ বস্ত্র পরে, অর্ধাহারে ছুটে চলে সংগ্রামী নারী। আপন কর্মস্হল গার্মেন্টস- ইট ভাঙ্গা- হসপিটাল- দিনমজুরে।

ঘরে তার রোগাক্লিষ্ট মা, আর আদরের ৩বছরের সন্তান…..। পায় কয়টা টাকা। ঘরে ফেরে রাতে; নিত্য পণ্য চাল-ডাল-নুন -তেল কিনে। ট্যাক্স দেয় সরকারকে কড়ায় গন্ডায়….। জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে.

প্রবাসী বাঙ্গালী। ঘরে ঋণগ্রস্হ পিতা। হতভাগী মা। প্রিয়তমা স্ত্রী। আদরের মেয়ে, ছোটবোন…..। প্রবাসে যান্ত্রিক জীবন, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম, অপরিচিত আবহাওয়ায় রোগ, শোক । বিশ্রাম বলতে রাতে ৪ঘন্টা ঘুম…..। মাস শেষে কিছু টাকা আয়। বাবা চাতক, সমিতির কিস্তির দিন সমাগত। টাকা পাঠায় ক্লান্ত শ্রমিক। সরকার কাটে ” রেমিটেন্স”। জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে

চৈত্রের কাঠফাটা রোদে, গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে, কালবৈশাখী ঝড় ঝাপটায়, প্যাডেল ঘোরায় রিক্সা চালক। দিন শেষে ১০ দিন সর্দি জ্বরে ভোগা সন্তানের জন্য কেনে কাশির সিরাপ, দেয় রাজস্ব। জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে….

স্বল্প বেতনের ইমাম, শিক্ষক, চাকুরে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সংসারে মধ্যবিত্তের কার্পণ্য। পুষ্টিহীনতায় ভোগা সন্তানের মলীন মুখ। প্রিয়তমার পরনে রংজ্বলা বিবর্ণ শাড়ী, স্বামীর চোখে নতুন করে ছেড়া-সেলাই লুকানোর অপচেষ্টা।

রাজস্ব দেয় নিয়মিত। জমা হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে…..।

গরীবের, প্রবাসীর, শ্রমীকের, শিক্ষকের, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ট্যাক্সের টাকায়, তিল তিল করে গড়ে তোলা, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হাজার হাজার টাকা লাপাত্তা !!

সরকার নিশ্চুপ !! বাংলাদেশ ব্যাংক নির্বিকার !

অন্যদিকে, ১৬ কোটি লোকের হাহাকার !

কোটি টাকার আই.টি উপদেষ্টা। লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যাংক কর্মকর্তা। বিশ্বখ্যাত গবেষক অর্থনীতিবিদ । গলাবাজ রাজনীতিবীদ। অনুভূতিপ্রবণ সাংবাদিক। দিনকানা মিডিয়া। সব শালারা নিশ্চুপ-নিরুত্তাপ-নিরুত্তর- নিরুত্তেজ………!!!!

প্রবাসীরা দেশে নিঃস্ব হয়ে বিদেশে কারাবন্দি । প্রবাসে অনেকে ভিক্ষার পথেও নেমেছে। অনেকে পাগল হয়েছে। আত্মহত্যার অনেক ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে নানা কারণে ১৫ হাজারের অধিক প্রবাসী বন্দি জীবন পার করছে। এদের মধ্যে অনেকে আছেন প্রায় ১০ বছর যাবত । প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী বন্দিদের দেশে ফেরত আনতে প্রতি মাসেই প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডে একাধিক আবেদন জমা পড়ছে। বন্দি প্রবাসীদের স্বজনদের অভিযোগ, বিদেশের কারাগারে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তির বিষয়ে দূতাবাসগুলোকে চিঠি দিয়ে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট লেবার উইংয়ের কর্মকর্তারা জোরালো ভূমিকা নিচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারের কোনো লিগ্যাল উইং না থাকায় প্রতারণার শিকার হওয়া প্রবাসী কর্মীদের বছরের পর বছর বন্দি থাকতে হচ্ছে। তা ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়েরও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে ।

এতকিছুর পর আমাদের রক্ত পানি করা টাকা দেশে গেলেই তা কাগজে পরিণত হয়। নানা উৎকোচ, হুমকি-ধমকি এবং মুক্তিপণ দিতে দিতে আমরা আজ অতিষ্ঠ।আমরা নিরুপায়, হতাশাগ্রস্থ, কোথায় যাবো? কার কাছে সমাধান চাবো? বিদেশ-বিভূঁই আছি; সবাইকে ছেড়ে! যাদের জন্য এ বিদেশ, তারাই যদি শান্তিতে না থাকে তবে কিসের জন্য পরদেশে এ ভিক্ষাবৃত্তি? কেন এই অনিদ্রা? আমরা শ্বাসরুদ্ধ, একটু নিঃশ্বাস ছাড়তে দিন।

দয়া করে বাঁচান আমাদের দেশকে। দেশটা শুধু আপনাদের না। খেটে খাওয়া দিনমজুর, কৃষক-শ্রমিক এবং প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় গড়া সরকার বুলেট বিদ্ধ করছে আমাদেরই স্বজনদের। লুটে-পুঁটে খাচ্ছে পিশাচেরা। আপনাদের বিলাস-বাসনের টাকা কোত্থেকে আসে? একটু চিন্তা করে কাজ করুন।

তবে একজন প্রতিবন্ধী প্রবাসী আছেন, যিনি আমেরিকায় বসবাসকারে দেশের তরে উপদেশ দিয়ে মাসে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা মাইনে নেন। লতিফ সিদ্দিকী ফাঁস করে দিয়েছেন বলেই জাতি আজ জানতে পেরেছে।

মিডিয়ার কল্যাণে অপর আরেকটি দিকও জানতে পারলাম যে, ১ কোটি প্রবাসী ১ মাসে দেশে যা পাঠায় ; ৫লাখ ভারতীয় তা নিয়ে যায় ১ সপ্তায় ! দেশে লাখ লাখ বেকার রেখে ভারতীয়দের বাংলা শিখিয়ে আমাদের দেশে চাকরি দেয়া হচ্ছে। বিদেশেও তারা বাংলাদেশী পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নিচ্ছে । শুধু তাই নয় আমি ফ্রান্সে ২০০৮/৯ সালে যখন গিয়েছিলাম তখন দেখেছি সেখানের বড় বড় কোম্পানি ও মার্কেটগুলোর বিভিন্ন পণ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা । বিশেষ করে পোশাক, চামড়া ও প্লাস্টিক পণ্যে ।তখন কি যে এক সুখ অনুভূত হতো তা বর্ণনাতীত । কিন্তু ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৬ তে গিয়ে দেখি বাংলাদেশের জায়গা করে নিয়েছে ভারত (ইন্ডিয়া ) ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া , চায়না, শ্রীলংকার মত দেশ।

তাই প্রবাসীদের চিন্তা করা উচিত, যারা দেশে যান তারা প্রবাস থেকে কিছু না নিয়ে বরং দেশে গিয়েই কিনুন। ঐ জিনিস বা ব্র্যান্ডটাই হয়তো দেশে আরো সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।এতে আপনার বহন করার ঝামেলা , ট্যাক্স ,হয়রানি থেকেও বাঁচলেন। ভাবতে পারেন দেশেরটা দুই নম্বর । এ কথাটা পুরোপুরি সত্য না । কারণ, অনেক জিনিস আমাদের দেশে ভালো। আবার অনেক জিনিস বিদেশী ভালো। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি ও আবহাওয়া অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের পণ্য ভিন্ন ধরন, মানের হওয়াই স্বাভাবিক ।আবার এও দেখেছি, দেশে বসেই বিদেশী পণ্য আরো স্বাচ্ছন্দ্যে এবং সুলভ মুল্যে কেনা যায়। তো নানা ঝামেলার কি দরকার।এ ছাড়া ট্যাক্স, চুরির ভয়, বহনে , যাতায়াতে বিড়ম্বনা ।

আর আপনারা প্রবাসীরা কেন বিদেশের মাটিতে দেশের তথাকথিত রাজনীতি করেন ? আপনারতো ভোটারাধীকার নেই। তাই বাংলাদেশের অংশ হয়ে আপনি এখন বিশ্ব নাগরিক । সে অনুযায়ী আপনার দায়িত্ব পালন করুন। দেশকে প্রবাসে রিপ্রেজেন্ট করুন। কোনো দলকে নয় ।

আরেকটু কথা। আচ্ছা, প্রবাসীরা — আপনি জমি কিনলে দেশ কি পাচ্ছে ? হুদাই হাত বদলে দুর্নীতি, মারামারি, সন্ত্রাস… বাড়ছে।ইউরোপে যে নিয়ম এবং নিজে বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে ও জেনে দেখেছি, এখানে জমির মালিকানা রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রণাধীন ।আপনি অনেক ধনী হলে এবং চাইলে রাষ্ট্র থেকে সে জমি অবস্থাভেদে সর্বোচ্চ ১শ’ বছরের জন্য লীজ নিতে পারেন। সেখানে ঘর বাড়ী বা রাষ্ট্রের অনুমোদন সাপেক্ষে যা ইচ্ছে নিয়ম মেনে করতে পারেন। মেয়াদ শেষে এ লীজ বংশ পরম্পরায় আপনার ওয়ারিশরা পাবে না। তবে তারা চাইলে কিছুটা অগ্রাধিকার পাবে (তা অবশ্যই যদি বর্তমান মূল্যে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ হয়। নচেৎ সবাই — নিয়মানুযায়ী ভাড়া বাসায় থাকেন। এ ক্ষেত্রে তারা সুবিধা পাবেন যারা কিনা রাষ্ট্রকে নিয়মমাফিক আয়কর পরিশোধ করেন। যাদের চাকরি, ব্যবসা দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে কাজ করেন। তারা সরাসরি সিটি কর্পোরেশন থেকে তুলনামূলক ভালো এবং কম মূল্যে বাসা বাড়া নিয়ে থাকেন। যা অন্যান্য প্রাইভেট কোম্পানি বা কোনরূপ হাত বদল হয়ে না পাওয়া। আরেকটি বিষয়, ইউরোপে সরকারি বেসরকারি চাকরিতে তেমন তফাৎ দেখিনি। আপনার নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও আপনি অবসরে সরকারি পেনশন পাবেন; যে হারে আপনি রাষ্ট্রকে আয়কর দিয়েছেন সে অনুযায়ী। তো এসব দেশের প্রবাসী হয়েও যদি আমি আপনি এ দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি কালচার আচার আচরণ চলাফেরা নিয়ম কানুন জীবন যাপন নিজে এবং পরিবারে প্রয়োগ করতে না পারেন। তাহলে কি হবে ? আপনি না দেশী হিসেবে বেঁচে থাকতে পারবেন( তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে) না বিদেশী তথা প্রবাসী হিসেবে ! অতএব, চিন্তা করুন। ভাবুন।এবং সঠিকটা প্রয়োগ করুন। সময় কিন্তু ফিরে আসে না; আসবেও না।

তাই সর্বশেষ সরাসরি বলছি, খুব বেশী হিসাব করে দেশে টাকা পাঠান। টাকা আপানার কাছে থাকলে শক্তি পাবেন। সময়মত পারিবারিক চাহিদাও মিটাতে পারবেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাদের হাতে দিয়ে উড়নচণ্ডী বানাবেন না । প্রবাস জীবনে আপনার মত হিসেবি তাদেরকেও করে তুলুন। এতে উভয়েরই লাভ। পরিবার পরিজন ভালো থাকুক। দেশ ভালো থাকুক।সকল প্রবাসীরা ভালো থাকুক।

যা লিখলাম তার চেয়ে অনেক বেশী তথ্য প্রমাণ আছে। এছাড়া আমার এসব কথার প্রমাণ, আপনি নিজেই পাবেন। বিগত কিছুদিনের নানান মিডিয়া এবং চলমান কয়েকদিনের প্রতি নজর রাখলেই পুরো দৃশ্যপট জ্বলজ্বল করে উঠবে।

হায়দার হোসাইনের গানটি গাইতে গাইতে আমি চলে যাচ্ছি —

“কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত

কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত

কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য

নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ।

আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া

করিতে পারিনি চিৎকার

বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্ক…

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version