এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : চাংলিমিথাং যেন এক খণ্ড কমলাপুর স্টেডিয়াম। থিম্পুতে জয়ের হাসি ঢাকার। আট মাস আগে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে আনন্দে নেচেছিলেন মারিয়া, তহুরা, আঁখিরা।
বৃহস্পতিবার থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে সাফের সেই আসরেরই সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভুটানকে ৫-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে আবারও ফাইনালে ওঠার আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন বাংলার কিশোরীরা।
শিরোপা থেকে এখন নিঃশ্বাস দূরত্বে গোলাম রব্বানী ছোটন শিষ্যরা। শনিবার সাফ শ্রেষ্ঠত্বের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
মারিয়াদের সাজানো-গোছানো, পরিচ্ছন্ন-পরিকল্পিত ফুটবলশৈলীর সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ভুটানের মেয়েরা। শুরু থেকেই আক্রমণে-আক্রমণে ভুটানের রক্ষণে কাঁপন তোলে বাঘিনীরা। ম্যাচের ১৮ মিনিটেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে দলকে শুরুর অগ্রগামিতা এনে দেন আনাই মুগিনি (১-০)। ৩৮ মিনিটে প্রায় একই রকম শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অনুচিং মুগিনি (২-০)। পিছিয়ে পড়ে গোল পরিশোধে মরিয়া হয়ে ওঠে ভুটান। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি।
উল্টো ৪৩ মিনিটে তহুরা গোল করলে ব্যবধান ৩-০ তে দাঁড়ায়। পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধে বিশ্রামে যায় গোলাম রব্বানী ছোটন শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে রক্ষণ সামলে আক্রমণে ওঠার পরিকল্পনা সাজায় স্বাগতিকরা। পরিকল্পনার ফলস্বরূপ শুরুতেই বক্সের সামান্য বাইরে একটি ফ্রি-কিক আদায়ও করে নেয়। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শট ভুটানের সমর্থকদের হতাশাই বাড়িয়েছে।
ভুটান হতাশ করলেও চাংলিমিথাংয়ে উপস্থিত গোটা শতেক লাল-সুবজ সমর্থকদের মন ভরানো, মন মাতানো খেলা উপহার দিয়েছেন মারিয়া বাহিনী। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও আগ্রাসী মেজাজে খেলেছেন তারা।
ভুটানের রক্ষণ দেয়াল দুমড়েমুচড়ে ৬৯ মিনিটে দলকে চতুর্থ গোল এনে দেন বাংলার গর্বিত অধিনায়ক মারিয়া মান্দা (৪-০)। ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ গোলটি আসে ৮৫ মিনিটে।
শাহেদা আক্তার রিপা বাংলাদেশের হয়ে ৮৬ মিনিটে এই গোলটি করেন (৫-০)। ম্যাচের বাকি সময় এরপর শুধু লড়ে গেছে দুদল। কিন্তু আর কোনো গোলের ঘটনা না ঘটায় ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। গত আসরের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা উল্লাসে মেতেছিল বাংলার কিশোরীরা। সেবার এই ভুটানের বিপক্ষেও জিতেছিল। তখন ব্যবধান ছিল ৩-০ গোলের। এবার ব্যবধান খানিকটা বাড়িয়ে নিয়ে ফাইনালের মঞ্চে পা রেখেছে বাংলার ফুটবলের জাগরণ ঘটানো কিশোরীরা।
গত আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। ফাইনালসহ ৪ ম্যাচ খেলে একটি গোলও হজম করেনি। এবারের আসরে গ্রুপপর্ব থেকে সেমিফাইনালসহ ইতিমধ্যে ৩ ম্যাচ খেলে একটিতেও হারের মেয়েরা। গোলও হজম করেনি।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের কোচ ছোটন বলেছিলেন, শিরোপা জেতার লক্ষ্যেই ভুটান যাচ্ছি। শিরোপা নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই। কোচের সুরে সেদিন সুর মিলিয়েছিলেন অধিনায়ক মারিয়া মান্দাও। কাল ফাইনালে ওঠে বলা কথার অনেকখানিই পূরণ করেছেন বাংলাদেশের সফল এ কোচ। ছোটন কথার জাদুতে নয় কাজে বিশ্বাসী।
ভুটানে আসার আগে এই দলটিকে নিয়ে আট মাস দীর্ঘ অনুশীলন ক্যাম্প করিয়েছেন। বাফুফের কৃত্রিম টার্ফে দুপুরের তপ্তরোদে শিষ্যদের অনুশীলন করিয়েছেন। সোনা পুড়ে যেমন খাঁটি হয়, মারিয়ারাও তেমনি কঠোর অনুশীলনের রোদে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। যার ফল টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফের ফাইনাল মঞ্চে বাংলাদেশ।
এদিকে দিনের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় গত আসরের রানার্স আপ ভারত এবং নেপাল। ম্যাচটি ২-১ গোলের ব্যবধানে জিতে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত।