এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মধ্যে আন্তঃকলহ, দ্বন্দ্ব, বিবাদ লেগেই রয়েছে। বর্তমানে উসকে উঠেছে সহসভাপতি বাদল রায়ের বক্তব্যে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরাসরি বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাদল রায়। সাবেক এই তারকা ফুটবলার ও কৃতী সংগঠকের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফুটবলের সর্বস্তরের সংগঠকরা। ক্লাব ও জেলা পর্যায়ের সংগঠকরা একবাক্যে ফুটবলের অবনতির জন্য সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে দায়ী করেছেন।
২০১৬ সালের বাফুফে নির্বাচনে সালাউদ্দিনের প্যানেল থেকে ১৮ জন নির্বাচিত হয়েছিলেন। সালাউদ্দিন প্যানেলের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন বাদল রায় ও তরফদার রুহুল আমিন। তাদের কাঁধে ভর করেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচিত হয়েই ওই দু’জনকে কোণঠাসা করে রাখা হয়। ব্যক্তিগত রেষারেষির জন্য ফুটবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। খাদের কিনারা থেকে ফুটবলকে টেনে তোলার চেয়ে বাফুফের গদি অক্ষত রাখার দিকেই মনোযোগ বেশি কর্মকর্তাদের। তৃতীয় মেয়াদে সালাউদ্দিন সভাপতি হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘এটাই আমার শেষ মেয়াদ আর নির্বাচন করব না।’ বাফুফে নির্বাচনে ইশতেহার ছিল প্রতি বছর বার্ষিক সাধারণ সভা করার। কিন্তু আড়াই বছর পার হলেও একটি সাধারণ সভা করতে পারেননি সালাউদ্দিন। ভোটের সময় কাউন্সিলরদের অনেক তোষামোদ করলেও নির্বাচন শেষে কোনো খবরই নেয়া হয়নি। সম্প্রতি কক্সবাজারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘দেশে এখন ফুটবলের ক্রান্তিকাল চলছে। আন্তর্জাতিক ফিফা র্যাংকিংয়ের তলানিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। মৃত এ ফুটবলকে জাগাতে হবে। বাংলাদেশ ফুটবলকে দেশের গণ্ডি থেকে বের করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছে দিতে হবে। এজন্য নতুন উদ্যোগ প্রয়োজন।’
গত বুধবার হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত অন্য এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নৌ পুলিশের প্রধান ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, ‘আমি ফুটবল কম বুঝি। তবে এতটুকু বুঝি, যোগ্য নেতৃত্ব না থাকলে সংগঠন দুর্বল হয়ে যায়। যা দেখছি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে। দুর্বল নেতৃত্বের কারণেই আজ বাফুফে ও বাংলাদেশের ফুটবলে এই দুরাবস্থা।’ সাবেক জাতীয় ফুটবলার আবদুল গাফফার বলেন, ‘আজ যারা ফুটবল ফেডারেশনে আছেন তাদের ক্লাব নাই। তাই ফুটবলের জন্য কোনো চিন্তা নেই। ফুটবল উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রকৃত ফুটবল সংগঠককেই আজ বাফুফেতে বসানো প্রয়োজন। সালাউদ্দিন কিংবদন্তি ফুটবলার হতে পারেন। কিন্তু প্রশাসক ও সংগঠক হিসেবে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বাফুফের সদস্য ও সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন, ‘বর্তমানে কোনো সিস্টেম নেই। কোন খেলোয়াড় কোথায় গিয়ে খেলবে বা কোথায় যাবে- তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই। বাফুফে ক্লাবগুলোকে বিকলাঙ্গ করে দিয়েছে।’ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ বলেন, ‘বাফুফে গত ১২ বছরে প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগ পুরোপুরি অনিয়মিত করে ফেলেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে তারা কাজ করছেন। অথচ মাঠে ফুটবল বলতে কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ফুটবলের ইতিহাস। কিন্তু আজ বাফুফেতে জামায়াত-বিএনপির কর্মকর্তাদের আধিক্য।’
বাড্ডা জাগরণীর কর্মকর্তা আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্সের কথা, ‘দেশের ফুটবল র্যাংকিং যখন ১৯৩, তখন কাজী সালাউদ্দিন আবারও স্বপ্ন দেখেন ক্ষমতায় থাকার। ফুটবল আজ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শুধু অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে। শেখ মোহাম্মদ আসলামের মতো তারকা ফুটবলারকে বাফুফে উপেক্ষিত করে রেখেছে। তাকে অন্যায়ভাবে স্কুল ফুটবলের সংগঠক থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ স্কুল ফুটবলের টাকা অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে।’ নারিন্দা ক্লাবের সহ-সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ শাবু বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলের যে অবস্থা তা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের চেয়ারগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আমাদের লজ্জা লাগে বাফুফের লজ্জা লাগে না। তাই এই বাফুফে দিয়ে কিছু হবে না।’ খিলগাঁওয়ের জালালউদ্দিন জালু বলেন, ‘এবার আর খালি হাতে তৈরি নয় লাঠি নিয়ে তৈরি থাকতে হবে। এই বাফুফের ওপর বিশ্বাস রেখে আমরা শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছি। সালাহউদ্দিন ফুটবল সংগঠকদের মেরে ফেলেছে। ফুটবলকে আটকে ফেলেছে টেবিলে তাই ফুটবলের উন্নতি হচ্ছে না।’ নবাবপুর ক্রীড়া চক্রের আলিমুজ্জামান আলমের কথা, ‘কাজী সালাউদ্দিন গত নির্বাচনের আগে একটি সুযোগ চেয়েছেন, দিয়েছি। কিন্তু নির্বাচনের শেষে তিনি সব ভুলে গেছেন।’ দিলকুশার আবদুল মান্নান বলেন, ‘এগিয়ে চলে বাংলাদেশ, পিছিয়ে চলে ফুটবল। বাফুফের কাছে ছোট ছোট ক্লাবগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা পায় বাফুফে সেগুলো পূরণ করে না।’ গৌরীপুর যুব সংঘের গাজী মাজহারুলের কথা, ‘বাদল রায়কে বাফুফে অপমান করেছে। সেই অপমানের বিচার করতে হবে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন শুধু তোতা পাখির মতো বুলি শোনান, উনি কিছুই করেন না।’