এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : মাহমুদউল্লাহর দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষার অবসান হল শেষতক। টেস্টে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। তার শতক স্পর্শের পরই অনুমিতভাবেই ছয় উইকেটে ২২৪ রানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা।
বুধবার ঢাকা টেস্টের চতুর্থদিন শেষে স্বাগতিকরা সন্দেহাতীতভাবে সিরিজে সমতা আনার আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে। ৪৪৩ রানের অলীক কল্পনার পেছনে ছোটা নিরর্থক।
এ কথা ভালোভাবেই জানে জিম্বাবুয়ে। কাল শেষ বিকালে ৩০ ওভার ব্যাট করে সাকুল্যে ৭৬ রান কুড়িয়েছে তারা। উইকেট খুইয়েছে দুটি।
দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (২৫) ও ব্রায়ান চারিকে (৪৩) ফিরিয়ে দিয়েছেন যথাক্রমে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং তাইজুল ইসলাম।
আজ শেষদিন জিম্বাবুয়ের দরকার আরও ৩৬৭ রান। আর বাংলাদেশের প্রয়োজন আট উইকেট। সফরকারীদের জন্য কাজটা যত কঠিন, স্বাগতিকদের জন্য ততই সহজ।
টেস্টে শেষদিনের উইকেট ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ সচরাচর করে না। তাই টেস্টের শেষ তিন সেশন তাইজুল-মিরাজের স্পিন-বিষ থেকে রক্ষা পাওয়া টেলর-উইলিয়ামসদের পক্ষে শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও।
মুমিনুল, মুশফিকুর এবং তাইজুল, মিরাজের পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছেন। আজ শুধু বাকি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা।
২১৮ রানে এগিয়ে থাকার পরও জিম্বাবুয়েকে ফলো-অন না করিয়ে কাল চতুর্থদিন নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির জন্যই ইনিংস ঘোষণা করতে একটু বেশি সময় নিয়েছে স্বাগতিকরা।
দিনশেষে এ নিয়ে মৃদু ফিসফিসানি থাকলেও জিম্বাবুয়ের বাকি আট উইকেট তুলে নেয়ার জন্য পুরো তিন সেশন যথেষ্টই হওয়া উচিত। দলে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া জায়গাটা ফের পোক্ত করতে এমন একটা ইনিংস খুব দরকার ছিল মাহমুদউল্লাহর।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক করেছিলেন। সাড়ে আট বছরেরও বেশি সময় পর সাদা পোশাকে আবার তিন অঙ্কের দেখা পেলেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক।
ইনিংস ঘোষণার সময় মাহমুদউল্লাহ ১০১ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। এর আগে মোহাম্মদ মিঠুন (৬৭) তুলে নেন নিজের প্রথম টেস্ট ফিফটি। ২৫ রানে চার উইকেট হারানোর পর মিঠুনকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহই বাংলাদেশের লিডটাকে নিয়ে যান জিম্বাবুয়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পার্শ্বচরিত্রে এই ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করে যাচ্ছেন মিরাজ। প্রথম ইনিংসে অষ্টম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়ে মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরিতে শামিল হয়েছেন। পরে তাইজুলের সঙ্গে বোলিংয়ে জুটি বেঁধে নিয়েছেন তিন উইকেট।
কাল দ্বিতীয় ইনিংসে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে তার ২৭* রানের ইনিংসটাও বড় ভূমিকা রেখেছে। দিন শেষে তাইজুলের সমান একটি উইকেট নিয়ে দলকে আরও নির্ভার করেছেন মিরাজ।
কাল শুরুতেই কাইল জার্ভিস ও ডোনাল্ড তিরিপানোর পেস আক্রমণে তছনছ হয়ে যায় বাংলাদেশের টপঅর্ডার। ২৫ রানের মধ্যেই চার উইকেট হারানোর পর দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
তাহলে কি ফলো-অন না করানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হল? ভুল যে হয়নি, সেটা প্রমাণ করলেন মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে দেখা গেল ৮৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ মিঠুনকেই।
অধিনায়কের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১১৮ রানের জুটি গড়ার পর আউট হন ৬৭ রানে। দ্রুত ফিরে গেলেন আরিফুল হকও। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশ পেয়ে গেছে ৩৬৯ রানের লিড। জয়ের জন্য হয়তো এই রানটাই যথেষ্ট। বাংলাদেশ তবু চারশ’ ছাড়ানো লক্ষ্য দিতে চেয়েছে।
আর সেই লক্ষ্য দিতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহও সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে যান। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি। শেষ ৩৯ রান করেছেন মাত্র ২৯ বলে। মিরাজ দারুণ সঙ্গ দিয়ে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিতে সহায়তা করেছেন।
ঠিক চা বিরতির আগে ১২২ বলে পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয়টির দেখা পেতে সময় লাগল আট বছর নয় মাস। এর মাঝে খেলেছেন ৩৫টি টেস্ট। দুই হিসাবেই দুই সেঞ্চুরির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময়ের রেকর্ড।
শেষ সেশনে জিম্বাবুয়েকে ৩০ ওভার বল করার সুযোগ হয়েছে। শেষ বেলায় দুই উইকেট নিয়ে তাতে স্বস্তিও মিলেছে। তবে প্রথম উইকেট নেয়ার জন্যই অপেক্ষা করতে হয় ২৩ ওভার পর্যন্ত। জিম্বাবুয়েকে ম্যাচ বাঁচানোর জন্য কমপক্ষে ৯০ ওভার টিকে থাকতে হবে। জেতার জন্য লাগবে আরও ৩৬৭ রান।