এশিয়ান বাংলা স্পোর্টস : একটা সময় ছিল জিম্বাবুয়ে মানেই মর্যাদার। জিততে পারলেই যেন ‘মহা আনন্দ’। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এখন দুই দলের লড়াই রূপ নিয়েছে মান-সম্মানের। হারলেই যেন টাইগারদের মাটিতে পতন। তাইতো গতকাল ২১৮ রানের বিশাল জয়ের পরও তেমন উচ্ছ্বাস দেখা গেল না দলের মাঝে। বরং মান রক্ষা হয়েছে তাতেই যেন স্বস্তি। টেস্ট ক্রিকেটে জয়-পরাজয়ের হিসেবে অবশ্য জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ব্যবধান কমলো বাংলাদেশের। যদিও সুযোগ ছিল এই সিরিজেই এগিয়ে যাওয়ার।

কিন্তু সিলেট টেস্টে বাজে হারের পর তা হাতছাড়া করেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল।

টেস্টে ১৬ বারের সাক্ষাতে ৭ হারের বিপরীতে ষষ্ঠ জয় দেখলো বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ঢাকা টেস্টের আগে শঙ্কা জেগেছিল হোয়াইটওয়াশ হওয়ার। পরিস্থিতি এমনই ছিল, জয় না পেলে ভিত নড়ে যাবে এই দেশের ক্রিকেটের। অবশেষে এলো দাপুটে জয়। তবে ট্রফি ভাগাভাগি করার আক্ষেপ ঝরেছে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কণ্ঠে। সেই সঙ্গে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দলের ঘুরে দাঁড়ানোতে দারুণ খুশি তিনি। ঢাকা টেস্টে ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহীমের ডাবল সেঞ্চুরি, মুমিনুলের ও তার নিজের সেঞ্চুরি। ম্যান অব দ্যা সিরিজ তাইজুলের সঙ্গে তরুণ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, ও নয়া পেসার খালেদকে নিয়েও প্রশংসা ঝরে অধিনায়কের কণ্ঠে। তবে বড় ব্যবধানে জয় এলেও সেটি যে সহজ তা মানতে নারাজ অধিনায়ক। তাই সবমিলিয়ে এই সিরিজ শেষে তুলেছেন তৃপ্তির ঢেঁকুরও।

ঢাকা টেস্টের ৫ম দিন চা বিরতির আগেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। যদিও টেইলরের সেঞ্চুরিতে প্রতিরোধ করে তুলেছিল জিম্বাবুয়ে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়েছে ২২৪ রানে। ২০০৫ এ বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয় এসেছিল এই দলটির বিপক্ষেই। সেবার ২২৬ রানের জয়টি ছিল টেস্ট ক্রিকেটে কোনো দলকে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে হারানোর তৃপ্তি। এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়টিও এলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এ নিয়ে ১১০ টেস্টে বাংলাদেশের ১১ জয়ের ছয়টিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অন্যদিকে সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ে জয় পেয়েছিল ১৫১ রানে। টাইগাররা প্রথম ইনিংসে ১৪৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গিয়েছিল ১৬৯ রানে। এখানেই শেষ নয় এই বছর আগের চার টেস্টের কোনো ইনিংসে দেড়শও ছুঁতে পারেনি দল। তাতেই বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন।

সেখান থেকে ঢাকা টেস্টের পারফরম্যান্স বলতে গেলে ব্যাটিং বিপ্লবও বলা যেতে পারে। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ৫২২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এরপর জবাব দিতে নেমে জিম্বাবুয়ে গুটিয়ে যায় ৩০৪ রানে। ১৯ রানের জন্য এড়াতে পারেনি ফলোঅন। বল হাতে দারুণ ভূমিকা রাখেন তাইজুল ইসলাম। ২১৮ রানের লিড নিলেও মিরপুরের উইকেটে ঝুঁকি না নিয়ে নিজেরাই ব্যাট করতে নামে টাইগাররা। এবার ৬ উইকেট হারিয়ে ২২৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৪৩ রানের। যা তাড়া করে জয় বা ড্র টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরল। হলও তাই দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেও ২১৮ রান দূরেই থামে তারা।

বাংলাদেশের জন্য শেষ দিনটি ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। উইকেট খুব একটা ভাঙেনি পাঁচ দিনেও। তাই স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে পারছিল ব্যাটসম্যানরা। দুই ম্যাচ সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট ও টানা চার ইনিংসে ৫ উইকেটের হাতছানি ছিল তাইজুল ইসলামের সামনে। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন আরো আরেক রেকর্ডের সামনেও। তবে দুই উইকেট পান তাইজুল। সেই সুবাদে দুই টেস্টের সিরিজে ১৮ উইকেট নিয়ে এখন তিনি চতুর্থ স্থানে। একই সমান উইকেটের মালিক এনামুল হক জুনিয়র ও সাকিব আল হাসানও। তবে সিরিজের শেষ দিনে তাইজুলকে ছাপিয়ে নায়ক হয়েছেন মিরাজ। দারুণ বোলিংয়ে ক্যারিয়ারে পঞ্চমবার নিয়েছেন ৫ উইকেট।

গতকাল দিনের প্রথম উইকেট এনে দেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। এটি এই সিরিজে তার এক মাত্র শিকার। তার দারুণ বলে লাইন মিস করে বোল্ড হন শন উইলিয়ামস। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে আরো একটি উইকেট পায় বাংলাদেশ। ফিরতি ক্যাচে সিকান্দার রাজাকে সাজঘরে ফেরান তাইজুল ইসলাম। ১২০ রানে নেই চার উইকেট পথ পাড়ি দিতে হবে আরো অনেক। তার উপর চাতারা ইনজুরিতে থাকায় একজন কম নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। এমন অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন টেইলর ও পিটার মুর। কিন্তু সেই প্রতিরোধ ভেঙে দেন মিরাজ। টেইলর একপাশ আগলে রাখলেও আরেকপাশে মিরাজ উইকেট তুলে নিয়েছেন টপাটপ।

শেষ পর্যন্ত টেইলর ম্যাচে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৬৪ বলে। জিম্বাবুয়ের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করলেন দ্বিতীয়বার। এর আগে ২০১৩ সালে হারারে টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষেই।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version