শামসুল আলম

ঘটনা ১: শেখ মুজিব কতৃক বিতাড়িত বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের পুত্র সোহেল তাজ দু’দিন ধরে খবরের শিরোনাম হয়েছেন ফেসবুকে হুমকি দিয়ে। তার এক ভাগ্নেকে গুম করার পরে তিনি পোস্টে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তিনি জানেন কারা গুম করেছে। অবিলম্বে ভাগ্নেকে মুক্তি দিতে হবে, নইলে তিনি প্রেস কনফারেন্স করে গুমকারীদের পরিচয় প্রকাশ করে দেবেন! (পোস্ট দেয়ার ৪৩ মিনিটের মধ্যেই এটি আমার নজরে আসে।) কিন্তু সোহেল তাজের ঐ হুমকিতে কোনো কাজ হয়নি, ভাগ্নেকে ছাড়েনি গুমকারীরা। কারণ তারা সোহেলের চাইতেও শক্তিশালি। পরে সোহেল প্রেস কনফারেন্স করেছে বটে, কিন্তু তিনি তার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভাগ্নেকে ফিরে পাওয়ার আবেদন রেখেছেন! এখন প্রশ্ন জাগে, তবে কি মিডনাইট প্রধানমন্ত্রীই গুমকারীদের বস? মনে পড়ে যায় জেনারেল এরশাদের একটি বক্তব্যঃ চিটাগাঙে একটি জনসভায় তিনি মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলেন, “কে গুম হবে আর কে খুণ হবে, সব খবর আগেই জানেন হাসিনা, তার নির্দেশ ছাড়া কিছু হয় না!” তাহলে কি তাই হয়েছে এখানেও? পরে জানা গেলো, সোহেলের ভাগ্নেকেও গুম করেছে- র‌্যাব। আজই গুম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল আশ্বাস দিয়েছেন, সহসাই ছাড়া পাবে সোহেলের ভাগ্নে! উত্তম কথা!! এমনটাই তো চাই! কিন্তু আজও ছাড়া পায়নি ইলিয়াস আলী, ব্রিগেডিয়ার আযমী, ব্যারিস্টার আরমান, কর্নেল হাসিন সহ গুম হওয়া শত শত মানুষ।

সোহেল তাজ তার প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলেন, আজ আমার ভাগ্নে গুম, তো কাল আপনার ভাই! কিন্তু সোহেল কবে বুঝলো এই সত্য? এক যুগ পরে? মানুষ কি ভুলে গেছে, এই সোহেল তাজ ২০০৯ সালে ছিল এই গুম সরকারেরই স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী, তখন পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসার সহ খুন হয়েছিল ৭৪ নাগরিক। তখন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল জানতো, হাসিনার জ্ঞাতসারে ঐ রাষ্ট্রবিরোধী হামলা ষড়যন্ত্রের কথা, কারা কারা ঐ ঘটনা ঘটিয়েছিল বিডিআর ধংস করেছিল, আর্মির কোমড় ভেঙে দিয়েছিল! সবকিছু জেনেও সোহেল তখন দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে পারেনি- জাতিকে কিছুই জানায়নি, বরং ভারতীয় খুনিদের একটি অংশকে সিলেট দিয়ে পার করে দেয়ার সাথে সোহেল নিজে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। তার আমলেও গুম ও বিচার ছাড়া খুন করেছে তারই বাহিনী, কিন্তু সোহেলকে এর প্রতিকার বা প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি। অনেক আপোষ করেও সোহেল টিকতে পারেনি, বাবার মত শেখ পরিবারের চড় থাপ্পড় খেয়ে দেশছাড়া হতে বাধ্য হয়েছিল। মাঝে মাঝে দেশে এসে রাজনীতির বাও দিলেও আর পুরোপুরি জড়ায়নি, কিন্তু গণভবনে গিয়ে গুমনেত্রীর আতিথেয়তা নিতে ভুল করেনি। তখন দেশজুড়ে হাজার হাজার লোক গুম হয়েছে, রাষ্ট্রীয় খুনের শিকার হয়েছে, প্রতি বছর গুম হওয়াদের স্বজনরা শিশুরা তাদের পিতা স্বামী ভাইকে ফিরে পেতে রোনাজারি করেছে, কিন্তু সোহেলদের কানে কখনও যায়নি সে কান্না। সোহেল কখনও প্রতিবাদ করেনি গুমের বিরুদ্ধে! এভাবে পিতার রক্তের সাথে বেইমানি করেছিল সোহেল। কিন্তু আজ যখন নিজের ভাগ্নে গুম হয়েছে, তখন সে বুঝলো- গুম কাহাকে বলে, উহা কত প্রকার এবং কি কি, কে করে, কষ্ট কেমন লাগে! শুধু সোহেলের জন্য নয়, সকল গুমকারী মন্ত্রী, নেতা খেতা, অফিসার, বাহিনী সবার ক্ষেত্রে এই একই কথা প্রযোজ্য- প্রত্যেককে ভুগতে হবে, কাঁদতে হবে। আজ কিংবা কাল। দুনিয়ার হিসাব দুনিয়াতেই দিয়ে যেতে হবে।

ঘটনা ২: গত দশ বছর আগে হাসিনা সরকারের অপকর্মের সাথী হিসাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি পদে যোগ দিয়েছিল সামীম আফজাল নামে এক জেলা জজ। ধীরে ধীরে প্রকাশও পেতে থাকে তার দুবৃত্ত চরিত্র। মুসলমানদের ঈমান আকীদার সর্বনাশ করতে করতে এমন অবস্খায় পৌছে যে অধিকাংশ মুসলমানই মনে করে – সে একটা মোনাফেক। দুর্নীতি, লুটপাটে আকন্ঠ নিমজ্জিত হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে শুরু করে ইসলামি ব্যাংক খেতে খেতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের পিলার হজম করার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে সামীম আফজাল। অবস্থা এত জটিল হয়ে যায় যে, তাকে আর ধারণ করতে পারছে না মিডনাইট সরকার। তার পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ছুটির দিনে সরকারী ফাইল সরিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেও ধরা খেয়েছে। এখন যেকোনো সময়ে তার পদচ্যুতি, মামলা, এবং কপালে থাকলে জেলের ভাতও খাওয়া লাগতে পারে।

ঘটনা ৩: রবীন্দ্র গোপ নামে এক আওয়ামী দুবৃত্ত মুক্তিযুদ্ধের নামে বানোয়াট ও মিথ্যা ইতিহাস লিখে তুষ্ট করেছিল হাসিনাকে। চামচামির ইনাম হিসাবে নিয়োগ লাভ করে সোনারগাঁওয়ের লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের পরিচালক হিসাবে। সেখানে বসে দেদারছে আকাম, কুকাম দুর্নীতি ও নারীদের নিয়ে রঙ্গলীলায় মত্ত থাকত এই গোপ। কিন্তু দশ বছরেও তার খাই খাই মিটেনা। এবছরে তাকে আর চুক্তি দেয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও সে পরিচালকের বাংলো ছাড়েনি। অবশেষে সেখানে নারীর সাথে লাম্পট্যরত অবস্থায় তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয় তারই ডিপার্টমেন্টের লোকজন। এভাবেই তাকে অসম্মনিতভাবে জাদুঘর ছাড়া করে তারই সরকারের লোকেরা।

প্রত্যেক জুলুমকারী, শয়তানের জন্য এসব হলো শিক্ষা। গুম, খুন, লুটপাট, রাষ্ট্র ধংসের খলনায়িকা এবং তার দলবলের জন্য অপেক্ষা করছে কঠোর শাস্তি এবং অপমানিত ও অপদস্ত হওয়া।
কেউ বোঝে, কেউ বোঝে না!

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version